জ্ঞান ফিরতেই স্ত্রী চাইলেন পানি, স্বামী দিলেন বিষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
টানাপোড়েনের সংসার। তবু ভালোবেসে করলেন বিয়ে। টেনেটুনে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দুই বছর কাটালেও আর চালাতে পারছিলেন না। যৌতুক হিসেবে চান ফার্নিচার আর টাকা। ফার্নিচার দিলেও টাকা দিতে না পারায় চলে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন। ঘরবন্দি রেখে স্ত্রীকে রাখেন অনাহার। দুদিন পর জ্ঞান ফিরতেই পানি চাইলেন স্ত্রী। কিন্তু পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালেন স্বামী।
এমনই অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কলাউড়া গ্রামের ২৬ বছর বয়সী নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।
নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন, ভালোবেসে খুব স্বপ্ন নিয়ে মনের মানুষকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিনিময়ে যৌতুকের জন্য আমার ওপর নির্যাতন করেছেন স্বামী। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, আমাকে বিষ দিয়ে হত্যাও করতে চেয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই বছর আগে নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। তাদের প্রেম ছিল। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন না যেতেই যৌতুকের জন্য তাদের সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন। স্ত্রীর ওপর চলে স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে ফার্নিচার দিতে স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন স্বামী নূর মোহাম্মদ ও তার মা হালিমা আক্তার। নির্যাতনের চাপ কমাতে বসতভিটার কিছু অংশ বিক্রি করে জামাইকে ফার্নিচার কিনে দেন মেয়ের বাবা। তবু নির্যাতন কমেনি।
চলতি বছরের ১৫ আগস্ট সৌদি আরব যাবেন বলে দুই লাখ টাকা নিয়ে আসতে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠান নূর মোহাম্মদ। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে টাকা দিতে পারেননি তার বাবা। ফলে স্ত্রী টাকা না নিয়ে স্বামীর বাড়িতে এলে একটি ঘরে বন্দি করে দুদিন অনাহারে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এতে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। জ্ঞান ফিরে পানি চান ভুক্তভোগী তরুণী। ওই সময় পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকে খাওয়ান স্বামী ও শাশুড়ি। পরে তরুণীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সবশেষ ২১ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত মামলাটি দোয়ারাবাজার থানায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নূর মোহাম্মদের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুপ্রাংশু দে দিলু বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।