সিলেটজুড়ে হতাশা: হাসপাতালে জীবন বাণিজ্য, অপচিকিৎসায় একদিনে নিভে গেল দুই প্রাণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
সিলেটে একইদিনে ভূল চিকিৎসায় ২জনের প্রাণহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে, এতে নিরাপত্তা প্রহরী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এমন ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে সিলেটের আকাশে, উতপ্ত হয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ জনতা, এর জের ধরে অবরোধ করে রাখেন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ।
হাসপাতালগুলোর এমন কর্মকান্ডে হতাশার আগুনে পুড়ছেন সিলেটিরা, তাঁরা দাবি করছেন সিলেটের হাসপাতালগুলোকে নগজরদারিতে নিয়ে আসার জন্য।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের সোবহানিঘাটস্থ মা ও শিশু হাসপাতালে এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। মৃত শিশুর স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতেই শিশুটি মারা যায়। কিন্তু স্বজনদের তা জানানো হয়নি।
হাসপাতালের বিল পরিশোধের পর তাদের বাচ্চার মরদেহ দেওয়া হয়।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি সত্য নয়। অতি উৎসাহী কিছু মানুষের প্ররোচনায় স্বজনরা হাসপাতালে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসনের সামনে তাদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা চলে যান।
শিশুর স্বজনদের মাধ্যমে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শিশু আরিয়ানকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন স্বজনরা। এ সময় হাসপাতালে কর্তপৃক্ষ শিশুকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। তবে বুধবার তিনটার দিকে স্বজনরা বাচ্চাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় শিশুটি ভালো আছে। পরে স্বজনা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করলে তারা বাচ্চার মরদেহ পান।
শিশু আরিয়ানের বাবা জাবেদ আহমদ বলেন, ‘আমার বাচ্চা গত রাতেই মারা গেছে। তবুও তারা আমাকে জানায়নি। আজ বিল পরিশোধের পর বাচ্চার লাশ পেলাম।’
এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাচ্চার লাশ দাফনের পর আমরা বিষয়টি ভাববো।’
আর মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মুরশেদুর রহমান বলেন, ‘বাচ্চার শারিরীক অবস্থা প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক ছিল। তাই তাকে আমরা লাইফ সাপোর্টে রাখি। তবে আজ তারা শিশুকে নিয়ে যেতে চাইলে তখন লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। তার কিছুক্ষন পর বাচ্চাটি মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যে অভিযোগ করছে বাচ্চাটি গতরাতেই মারা গেছে। সেটি সত্য নয়। কারণ বাচ্চা কখন মারা গেছে তা ইজিসি করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। স্বজনরা শিশুর লাশ নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেও পরে কিছু অতিউৎসাহী মানুষ তাদের আবার হাসপাতালে নিয়ে এসে কিছু হাঙ্গামা করায়। তবে পরে পুরো বিষয়টি প্রশাসনের সামনে তাদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে।’
এর আগে সিলেটে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে নগরের রাগিব রাবেয়া মেডিক্যালে ক্যাম্পাসে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও আইসিইউতে রেখে দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স ও আইসিইউ কক্ষের গ্লাস ভেঙে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তারক্ষীরা স্বজনদের ওপর হামলা করেন। তাদের লাঠিপেটায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এর জের ধরে রোগীর স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় একঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
রোগীর স্বজনরা জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর ফুলজান বেগমকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রোগীর শরীর থেকে টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে ওইদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারকালে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কারণে আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। বুধবার রোগীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিহতের ছেলে সামাদ রহমানের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তিনদিন আগেই তার মা মারা গেছেন। এরপরও অতিরিক্ত বিল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা মরদেহ আইসিইউতে রেখে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা করে তাদের রক্তাক্ত জখম করেন।