করোনায় সিলেটে বন্ধ অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৫৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
করোনা সংক্রমণের কারণে ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার সারা দেশের মতো সিলেটের ১ হাজার ৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে ক্লাস। সরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধশত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (কিন্ডারগার্টেন)। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তো ছিলই না, বন্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকও। এর ফলে বিপাকে পড়েছে শত শত শিক্ষার্থী-শিক্ষক। জানা গেছে, আর্থিক সংকটের কারণে এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে বাড়িভাড়া দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া অর্ধশত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম আগামীতে শুরু করা যাবে কিনা তা নিয়েও গভীর সন্দেহ রয়েছে। কথা হলে সিলেট কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা বদরুল আলম জানান, জেলায় প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে করোনার কারণে সব গুটিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করেছে অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠান।
বছর তিনেক আগে নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে রবীন্দ্র-নজরুল মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর ছাত্রদের বেতনও আটকে যায়। ভবনের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। পরে ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় এটি। এছাড়া নগরীর বাগবাড়ী এলাকার বিদ্যারণ্য স্কুল অ্যান্ড মহিলা কলেজ, সুবিদবাজারের নলেজ হোম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চৌকিদেখি এলাকার শাহজালাল প্রি-ক্যাডেট একাডেমি, বনকলাপাড়ার সিলসিটি ট্যালেন্ট হোম, শাহপরান এলাকার মা-মণি কিন্ডারগার্টেন (দুটি শাখার মধ্যে একটি), উপশহরের হলিসাইড স্কুলসহ নগরীর অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানামুখী সংকটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যালয় ভবন অন্যত্র ভাড়াও দেওয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে নলেজ হোম স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনটির একপাশে ভাড়া থাকছেন রেস্টুরেন্ট কর্মীরা। স্কুলের সাইনবোর্ডও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নলেজ হোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শওকত হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন পাইনি। তবু আমরা এক বছরের বেশি সময় বিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায় ছিলাম। একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের ভবন ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান তালুকদার বলে, করোনার কারণে আমি বাড়িতে ছিলাম। কয়েক মাস আগে সিলেটে এসে জানতে পারি স্কুল আর কোনোদিন খুলবে না। শিক্ষকরা আমাদের অন্য স্কুলে ভর্তি হতে বলেছেন।
২০১০ সালে নগরীর বাগবাড়ী এলাকায় বিদ্যারণ্য স্কুল অ্যান্ড মহিলা কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। করোনা মহামারিতে তাদেরও শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে ভবনটি বাসা হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারী অঞ্জনা মল্লিক বলেন, এই বছর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আয়া হিসেবে কাজ করতাম। এখন বেকার হয়ে গেছি। আমার স্বামীও এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তিনিও কাজ হারিয়েছেন। এখন ভ্যান চালান। বিদ্যারণ্য স্কুল অ্যান্ড মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ফি পাইনি। কীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাব? ফলে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
সিলেট কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা বদরুল আলম বলেন, করোনায় বেসরকারি শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষার্থীদের বেতনে। কিন্তু করোনায় আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন-ফি নিতে পারিনি। এই দুঃসময়ে আমরা সরকারেরও কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হয়। ফলে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।সুত্র-যুগান্তর