সিলেটে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
কয়েকদিনের গরমে সিলেটের জনজীবন অতিষ্ঠ। অতিরিক্ত গরমে অস্বস্তিতে দিন পার করছেন নগরবাসী। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণেই দেশজুড়ে তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তাই আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে বৃষ্টি নামতে পারে। বৃষ্টি নামলেই কমবে তাপদাহ।
সিলেটে কয়েকদিন ধরেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। দিনের বেলায় কাঠফাঁটা রোদ থেকে বাঁচতে অনেকে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেও সেখানেও মিলছে না স্বস্তি। শ্রমজীবী আর গণপরিবহনের যাত্রীদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। সন্ধ্যার পর পরিবেশ আরও গুমট হয়ে ওঠে, রাতেও থাকে ভ্যাপসা গরম। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হচ্ছে। ফলে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
নগরের বন্দরবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ রফিক আলী বলেন, ‘এমন গরম এর আগে কখনও দেখিনি। গোসল করেও শান্তি মিলছে না। ফ্যানের নিচে দাঁড়ালেও ঘেমে যাচ্ছে শরীর। একটু বৃষ্টির জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তাপমাত্রা যতটুক তার চেয়ে বেশি গরম অনুভ‚ত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে যতটুক বুঝা যাচ্ছে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। ফলে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশেই বৃষ্টি ঝরবে। তবে সিলেটে বৃষ্টি নামবে ১৬ তারিখের দিকে। তখন গরম কেটে যাবে। এছাড়া মঙ্গলবার থেকেই গরম কিছুটা কমতে শুরু করবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভ‚ত হয়ে এখন উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থলের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে। এ বাইরে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটূয়াখালি, ভোলা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছাস হতে পারে।
ভারী বৃষ্টির সতর্কতায় বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।
সিলেটে বৃষ্টির দেখা না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে সিলেটে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। শুধু সেপ্টেম্বর নয় পুরো বছরেই এবার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। শুধু গত আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত আমরা দেখেছি।’