সিলেটে অটোরিকশায় ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্রের ফাঁদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২১, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গত ১৭ জুলাই সকালে সিলেট শহরতলীর তেমুখী পয়েন্ট থেকে আম্বরখানা আসার উদ্দেশ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেন মদন মোহন কলেজের এক শিক্ষার্থী। সুরমা গেট আসার পরেই সিএনজিতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাই শেষে তাকে অজ্ঞান করে রাস্তায় ফেলে যায়। যাওয়ার সময় ঘটনা কাউকে না বলার জন্য শাসায়। এমনকি পুলিশের ধারস্থ হলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা। একমাত্র ছেলের জীবন রক্ষায় পুলিশি ঝামেলা এড়াতে ঘটনাটি কাউকে জানায়নি কলেজ শিক্ষার্থীর পরিবার।
এর আগে ওই সড়কে সিএনজি অটেরিকশায় থাকা ছদ্মবেশী যাত্রীরা অত্যন্ত সুকৌশলে স্কুলশিক্ষক খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও মোবাইলের সন্ধান পাননি তিনি। শুধু এই দুটি ঘটনা নয়। সিলেটের বিভিন্ন সড়কে এভাবেই সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের মোবাইল ও টাকাসহ জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধা দিলে ছুরিকাঘাতের শিকার হতে হয় যাত্রীদের। এসব ছিনতাই কাজে সহযোগিতা করছেন চালকরা। সংঘবদ্ধ এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাই করে আসছে। এতে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে অটোরিকশায় চলাচল। অনেকেই পুলিশি ঝামেলার কারণে থানায় অভিযোগ দিতে চান না।
তবে মাঝে মধ্যে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন। সর্বশেষ শনিবার রাতে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন, হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পৈল গ্রামের সাজিদ মিয়ার ছেলে মো. মোহন মিয়া, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর আকাখাজনা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আদোয়া বড়কাপন গ্রামের মো. শামছুল আলমের ছেলে রেজাউল করিম রেজা। তার সবাই সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো. আশিক মিয়া ও তার স্ত্রী হাসপাতালের ওভারটাইম ডিউটি শেষ করে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। আম্বরখানা হোটেল পলাশের সামনে পৌঁছালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে গতিরোধ করেন। এ সময় ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে মোবাইল টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় আশিক মিয়া ও তার স্ত্রী চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় টহল পুলিশ ধাওয়া করে তিন ছিনতাইকারীকে আটক করে। এ সময় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আশিক মিয়া বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইকারী চক্র সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করে ছিনতাই করে আসছে। অটোরিকশার ভেতরে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা ওত পেতে বসে থাকে। পরে কৌশলে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব লুটে নিয়ে যায়। অনেক সময় মালামাল দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে যায়। ভয়ে যাত্রীরা সবকিছু দিতে হয়।
নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, দর্শনদেউড়ি পয়েন্ট থেকে অটোরিকশায় উঠে মদিনা মার্কেট যাচ্ছিলাম। পথে একজন যাত্রী নামার সময় চালক আমার কাছে খুচরা টাকা নিতে চায়। আমি বসা থেকে কিছুটা দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ থেকে খুচরা টাকা দেই। কিছুদুর যাওয়া পরে গাড়ি থেকে নেমে দেখি আমার মোবাইল নেই। এরপর সিএনজি অটোরিকশাকে ধাওয়া করতে চাইলে চালক দ্রুত গতিতে চলে যায়। অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল উদ্ধার করতে পারিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহেরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।