দেশজুড়ে সমালোচিত ছাতকের সেই সুন্দরী ডায়না উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০২১, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুন্দরী, বহুরূপী, লাবণ্যঘেরা কামুক চেহারার এক রহস্যময়ী তরুণী ডায়না আক্তার। ভয়ঙ্কর সুন্দরী বহুরূপী ডায়নার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব, কাতার, ওমান, দুবাই, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, ইতালি, ইরাক, ইরান ও গ্রিস প্রবাসীসহ অনেক বিত্তশালী পরিবারের যুবক নিঃস্ব হয়েছেন।
সেই সুন্দরী ডায়না আক্তারকে ছাতক ও বড়লেখা থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ৫নং দক্ষিণ সাহবাজপুর ইউনিয়নের ষাটঘরি গ্রামের মৃত আব্দুল ইয়াবেদ ও শাহানা বেগমের পুত্র সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিলের বাড়ি থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
ডায়না প্রেমকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে খাতির জমাতেন। কখনোবা আবার সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক টাকা। দেশে ফিরলে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন নীরবে নিশিতে। একান্তে সময় কাটিয়ে গোপনে ছবি তুলতেন। পরে সেই অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে করতেন বাধ্য করতেন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে তাও গোপনে ।
ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছন নগদ টাকা-পয়সা সোনা গয়না। তার পুরো পরিবারের সবাই এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নানা তালবাহানা করে সুকৌশলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেই পরিবারটিকে অবশেষে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
ডায়না আক্তার সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার ইউপির মুলতানপুর গ্রামের ফনা উল্লা ও দিলা বেগমের মেয়ে।
জানা যায়, ফনা উল্লা ও দিলা বেগম দম্পতির ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে। ১৫ সদস্য একটি প্রতারক চক্র গঠন করে ডায়নার বড় বোন সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে অনলাইনে ভিডিওকলের মাধ্যমে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ প্রবাসী ১২টি দেশের অর্ধশতাধিক যুবককে প্রতারিত করেছেন এই দুষ্ট চক্র ।
ছাতকে বহুল আলোচিত সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগম, তার স্বামী আলী হোসেন, আপন ভাই ইমাদ উদ্দিন, ছোট বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল।
প্রতারক চক্রের মূল হোতা ও প্রধান সহযোগী সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন। গৃহকর্মী রিনা বেগম ফনা উল্লা’র ২য় মেয়ে। রিনা বেগমকে একই উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের মামনপুর গ্রামে আলী হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দিলেও সে ঘর জামাই হিসেবে ফনা উল্লা’র বাড়িতেই বসবাস করে। বিয়ের কিছুদিন পর আলী হোসেনের স্ত্রী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে চলে যায়।
স্ত্রী প্রবাসে থাকার সুযোগে আলী হোসেন তার শ্যালিকা রোবেনা ও ডায়নার বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘরজামাই আলী হোসেন স্ত্রী প্রবাসে থাকায় স্ত্রীকে ব্যবহার করে সৌদি প্রবাসে বসবাসরত টাকাওয়ালা যুবকদের সঙ্গে শালিকাদের টোপ দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেন।
গৃহকর্মী রিনা ও তার স্বামী আলী হোসেনের মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী যুবক। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলে টার্গেটকৃত যুবকদের।
২০১৯ সাল থেকে গৃহকর্মী রিনা সৌদি যাওয়ার পর কিছু সংখ্যক প্রবাসী যুবকদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে প্রথমে সে নিজে, পরে তার আপন ছোট বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তারকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘায়িত হলে ভিডিওকলে ডায়না আক্তার ও রোবেনা তাদের শরীর দেখিয়ে যুবকদেরকে আকৃষ্ট করে।
সুকৌশলে ভিডিওকলের কিছু অংশ স্ক্রিন রেকর্ড রেখে যুবকদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব টাকা গৃহকর্মী রিনা ও তার স্বামী আলী হোসেন, রিনার বড় ভাই জয়নাল ও ইমাদ মিলে ডায়না আক্তার ও রোবেনাকে জিম্মি করে তাদের ব্ল্যাকমেইলের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।
গত জুন মাসে প্রথম সপ্তাহে ডায়না আক্তার সুকৌশলে বের হয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আব্দুল গফুরের ছেলে সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিলের কাছে চলে যায়। পালিয়ে যাবার ঘটনায় তার বড় ভাই জয়নাল বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি অপহরণ নাটক সাজিয়ে এলাকার খাদিজা ও সাবানা বেগম নামের দুটি নিরীহ গৃহবধূর নামে একটি অভিযোগ থানায় দায়ের করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশ-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবকের প্রতারণার রহস্যময় ঘটনা বেরিয়ে আসছে।
প্রতারিত যুবকরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার গ্রিস প্রবাসী হাছান তালুকদার, মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম, পর্তুগাল প্রবাসী তুফায়েল আহমদ, কাতার প্রবাসী রুকন উদ্দিন, দুবাই প্রবাসী আলী আকবর, ওমান প্রবাসী নোমান আহমদ, ইতালি প্রবাসী ছাদিকুর রহমান, ইরান প্রবাসী মকবুল আলী, ইরাক প্রবাসী মিছবাহ উদ্দিন ফকিরসহ দেশে-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন তালবাহানা দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলী হোসেন-জয়নাল চক্র।
পুলিশ জানায়, সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন, জয়নাল, ইমাদ চক্রের বেপরোয়া তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে দেশ-বিদেশের অনেক যুবক প্রতিনিয়তভাবে প্রতারিত হচ্ছে।
ডায়না আক্তার জানান, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি লাভ ও নিজের ভবিষ্যত বিবেচনায় রাতের আঁধারে নিজ গৃহ ত্যাগ করেছেন। তার বোন সৌদি প্রবাসী রিনা বেগমের স্বামী আলী হোসেন প্রায় রাতে তার রুমে অনধিকার প্রবেশ করে বিভিন্ন টাকাওয়ালা যুবকের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য জোরপূর্বক বাধ্য করেছে।
ডায়নার দাবি, এ বিষয়ে তাকে মানা করলে সে আমাকে এসিড নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারবে এবং তার সঙ্গে রাতে না ঘুমালে আমাকে আমার মা-বাবার সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করত। এসব নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আর কোনো যুবকের সঙ্গে প্রতারণা না করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ আমাকে অপহরণ করেনি বলে দাবি করে।
ওরা আমাকে উলঙ্গ করে মারপিট করে ইমোর মাধ্যমে সৌদি আরবের একাধিক যুবকের কাছে ছবি দিয়ে প্রথমে প্রেম তার বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে দুটি সিম বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয় প্রতিকারের দাবি ডায়না আক্তারের।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এহতেশাম তালুকদার বলেন, মেয়েটির সঙ্গে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত একাধিক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক নিয়ে একটি ছেলের সঙ্গে সে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর বাদীর দিকে।
ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন জানান, নিখোঁজ ভিকটিমকে উদ্ধারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই তাকে উদ্ধার করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।