সেই নারীর লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করল বিমান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২১, ১২:৫৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী জামিলা চৌধুরীকে রেখে বিমান চলে যায়। এ ঘটনায় সর্বত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিমানবন্দরের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার রাতে তার বাসায় গিয়ে ৪ আগস্ট তাকে লন্ডন পাঠানো টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
গত ২৮ জুলাই সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাটের বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী প্রবাসী জামিলা চৌধুরী। কিন্তু তিনি ওইদিন যুক্তরাজ্য যেতে পারেননি লাগেজে অতিরিক্ত মাল থাকাকে কেন্দ্র করে ওসমানী বিমানবন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তার অন্যায় আচরণের জন্য।
ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে এলে তা বিমান কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে জামিলা চৌধুরীর বাসায় যান বিমানের একটি প্রতিনিধি দল। বাসায় গিয়ে তাকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সান্তনা দেন এবং আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাজ্য যাওয়ার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন এবং দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।
লন্ডন প্রবাসী জামিলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, তিনি বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে লন্ডনে সন্তানদের রেখে দেশে এসেছিলেন। গত বুধবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এ তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা। সেখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলও বুকিং করা ছিল। ২৮ জুলাই (বুধবার) জামিলা চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান। তখন নিজ মোবাইলে লোকেটর ফর্মটি দেখালেও প্রিন্ট কপি চান এক কর্মকর্তা। এখান থেকেই মূলত ঘটনার শুরু।
জামিলা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, বারকোডযুক্ত লোকেটর ফর্মের প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না; যেখানে সবকিছুই বর্তমানে ডিজিটালি চলছে। তবে বিমান কর্মকর্তা সেটি মানেননি। খানিকক্ষণ বাক-বিতণ্ডার পর জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরের নির্ধারিত কাউন্টারে লোকেটর ফর্ম প্রিন্ট করার জন্য যান। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করাতে পারেননি। এখানে দুই দফায় বেশ খানিকটা সময় চলে যায় বলে জানান জামিলা চৌধুরী।
তিনি অভিযোগ করেন, এরপর আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন সেই কর্মকর্তা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেবার জন্য। কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।
এ সময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি। বিমান তাকে রেখে বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফ্লাইট ধরতে না পারার কারণ হিসেবে বলছিলেন, অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কথা।
সিলেট বিমানবন্দরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ওই যাত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জামিলা চৌধুরীর বাসায় উপস্থিত হয়ে তাকে সান্তনা দেন এবং আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা আগামী ৪ আগস্ট জামিলাকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার টিকেট কনফার্ম করেন এবং সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ ছাড়াও তদন্তসাপেক্ষে ওই দিনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাসও দেন তারা।