ওসমানীনগরে মসজিদের কাঠাঁল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টা-পাল্টি মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩০:০১,অপরাহ্ন ২৬ জুলাই ২০২১
ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
সিলেটের ওসমানীনগরে মসজিদেও কাঠাঁল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুটো পক্ষ পাল্টা-পাল্টি মামলা করেছে ওসমানীনগর থানায়। দুটি মামলায় আসামী দেখানো হয়ে মোট ৪৫ জনকে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুরুষ শুন্য রয়েছে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের কামাল পুর বাইতুল মামুর জামে মসজিদে একটি কাঁঠালের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিলামকে কেন্দ্র করে ওসমানীনগর উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি ও হেফাজত নেতা মাওলানা সুয়েব ও উমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র কওে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয় মসজিদ অঙ্গন ও আশপাশের এলাকা। দুটি পক্ষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।এ ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাসহ ১৪ জন আহত হন।
খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এদিকে স্থানীয় ৮ ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রবীণরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত সবাইকে সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে,শনিবার গভীর রাতে উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ দিলে পাল্টাপাল্টি মামলা দুটো রেকর্ড করা হয়। হেফাজত নেতা মাওলানা সুয়েবের পক্ষ থেকে মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ। এ মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭জনকে অজ্ঞাত রেখে আসামী করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কাওছার আহমদের পক্ষে মামলায় বাদী হয়েছেন সংঘর্ষে আহত আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে সাইফুল আলম। তার মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত ৮জন। মামলার পর থেকে উভয় পক্ষ এলাকা ছাড়া। পাশাপাশি মামলার অভিযুক্ত নন, এমন অনেকেও ভয়ে আত্মগোপন করেছেন।
রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেটের এডিশনাল এসপি (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক, দুটি মামলার ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মাছুদুল আমিন ও এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার তার সাথে ছিলেন।
শনিবার বিকেলে সরজমিনে কামালপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, মাস খানেক আগে বাইতুল মামুর জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি হেফাজত নেতা মাওলানা সুয়েব আহমদের মরহুম পিতার নামে শিরনী বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা হয়। সে সময় শিরনী গ্রহণে অপারগতা জানায় গ্রামের কয়েকটি পরিবার।এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হেফাজত নেতা মাওলানা সুয়েব গংরা গ্রামের কাওছার আহমদ,আবু বকর সিদ্দিকী, শাহীন মিয়া, মুজিব মিয়া ও প্রবাসী সামসুল ইসলামের পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করেন। এতে গ্রামে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা ও উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সুয়েব ও অন্যপক্ষের নেতৃত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদ।
গত ১৬ জুলাই মসজিদের একটি কুমড়ার নিলাম নিয়েও উক্ত দুটি পক্ষ বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হলে অন্যদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়েছিল।এক পক্ষের মামলার বাদী সাইফুল আলম শ্যামল বলেন-আমার আব্বা, চাচারা জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে বৃষ্টি থাকায় সবাই মসজিদে আটকা পড়েন। এরপর কাঁঠালের নিলামকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে বিবাদীরা মসজিদের উঠোনে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।বিবাদীদের এই হামলা আমরা পূর্ব পরিকল্পিত হিসাবেই মনে করছি। কারণ, হঠাৎ করে এতো লাঠি, রড,পাইপ আসার কথা না। তাদের বাড়ি মসজিদ পার্শ্ববর্তী হওয়ায় তারা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল।আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। সবচেষ্টে কষ্টের বিষয় হচ্ছে- উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্ব এ হামলা হয়েছে।
ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে ইকবাল আহমদের হাতে লাঠি থাকার বিষয়ে অপর মামলার বিবাদী উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ বলেন,সংঘর্ষের সময় আমি উভয়পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম।এ সময় একজন আমার মাথায় আঘাত করলে আমি তার হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেই।ভিডিও চিত্রে সেই লাঠিসহ আমায় দেখানো হয়েছে। বিবাদীদের হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন।
ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বলেন-মসজিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকার জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় উভয় অভিযোগ মামলা আকারে নিয়ে আসামী ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।অধিকতর তদন্ত করে উভয় মামলার চার্জসীট প্রদান করা হবে। কাউকে ছাড় বা মিথ্যে হয়রানি করা হবে না।