সিলেটে প্রবাসীদের টিকা রেজিস্ট্রেশনেও দালাল, স্বাস্থ্যবিধি উধাও
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২১, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে আসা প্রবাসীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নির্ধারিত হারের চেয়ে টাকা জমা দিতে হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশনে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। দালালরা টাকার বিনিময়ে গিয়েও আগে রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছেন। এ কারণে প্রবাসীদের কেউ কেউ ২ থেকে ৩ দিন লাইনে দাঁড়িয়েও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। প্রবাসী শহর সিলেটের কয়েক হাজার প্রবাসী বিদেশ যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রবাসীদের সুবিধার্থে জেলায় জেলায় টিকা রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম চালু হয়েছে। এ কারণে গত তিনদিন ধরে সিলেট নগরীর উপ-শহরের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে প্রবাসীরা উপস্থিত হচ্ছেন।
দিনে দিনে বাড়ছে প্রবাসীর সংখ্যাও। প্রথম দিন শ’খানেক প্রবাসী উপস্থিত থাকলেও গতকাল কয়েকশ’ প্রবাসীর উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সিলেট নগরীর উপ-শহরের সি ব্লকের ৪১ নম্বর রোডে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অবস্থিত। এই অফিসে ভোর থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ান প্রবাসীরা। দুপুর পর্যন্ত কয়েকশ’ প্রবাসীর লাইন হয়ে যায়। কিন্তু কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে মাত্র একটি বুথ। এই বুথে প্রবাসীর রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে ঢিমেতালে। এ কারণে প্রবাসীরা দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা টিকা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে করে অনেকেই পড়েছেন বেকায়দা। কারণ- টিকা না পেলে তারা বিদেশও যেতে পারছেন না। চাপ সামলাতে নতুন করে বুথও বাড়ানো হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রবাসীদের জট লেগেই আছে। কয়েকশ’ প্রবাসী ও তাদের স্বজনরা উপস্থিত থাকায় স্বাস্থ্যবিধি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রবাসীরাই অভিযোগ করে বলেছেন- তারা রেজিস্ট্রেশন করে করোনা টিকা নিয়ে বিদেশে যাবেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে, টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে আসা প্রবাসীরা নিজেরাই সংক্রমণের শিকার হতে চলেছেন। কয়েকশ’ মানুষ গাদাগাদি করে রেজিস্ট্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। রেজিস্ট্রেশনের প্রতিযোগিতায় থাকা প্রবাসীরা নিজেই পড়ছেন করোনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
তারা জানিয়েছেন- একটি মাত্র বুথ দিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। বুথ বাড়ালে দ্রুতই রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে- করোনার টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে আসা প্রবাসীরা বিকাশে টাকা জমা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রবাসীরা জানিয়েছেন- টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২২০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার কথা। কিন্তু তারা নিজেদের বিকাশ অথবা নিজের এলাকার কোনো বিকাশ নম্বর থেকে সেই টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। কেবলমাত্র জনশক্তি অফিসের আশপাশের যে বিকাশের এজেন্টগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আর এতে বিকাশের ওই এজেন্টরা ২২০ টাকার স্থলে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা নিচ্ছেন। টাকা জমা দিতে বাধ্য হয়ে প্রবাসীরা বেশি হারে টাকা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। একই সঙ্গে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে কিছুসংখ্যক দালাল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন হয় লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু দালালরা রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিলেই দালালরা ভেতরে ঢুকে প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন করে এনে কাগজ দিচ্ছে। বাইরে দালালরা সক্রিয় থাকার কারণে ভেতরের একটি বুথে তাদের দেয়া প্রবাসীদের টিকার রেজিস্ট্রেশন আগে করা হচ্ছে। এতে করে ২-৩ দিন লাইনে দাঁড়িয়েও সেই রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। এ নিয়েও তাদের ক্ষোভের অন্ত নেই।
কাতার প্রবাসী নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন- ‘ভোরে রিকশা নিয়ে টিকা নিবন্ধনের জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে এসেছি। সকালে আসার পরেও দেখি আরও ৭০-৮০ জন চলে এসেছেন। অনেকেই নাকি রাতে অফিসের বারান্দায় ঘুমিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি হচ্ছে প্রবাসী। আর এই প্রবাসীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকা নিবন্ধনের জন্য। কোনো নিয়ম নেই এখানে। যারা দালাল ধরে কাজ করছেন তাদের কাজ আগে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।’
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন- টাকা গ্রহণের বিষয়টি বিকাশের। এটি তাদের না। আর রেজিস্ট্রেশন করতে আসা প্রবাসীদের যাতের ভোগান্তি কম সেদিকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। একইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যাতে পালন হয় সে ব্যাপারেও তারা সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান।