সিলেট ৩ : কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারি?
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২১, ৩:০০ অপরাহ্ণ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ সংসদীয় আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না আসায় সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরপর তিনবারের এমপি মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাস দুয়েক আগ থেকেই মাঠ গরম করে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদের পর থেকেই মাঠে রয়েছেন তারা। কেউ কেউ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যদিকে এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। নির্বাচনী এলাকায়ও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনে প্রার্থী হতে অনেক নেতার আগ্রহ রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা আগামী ২৮ জুলাই।
নির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠে চলছে নানা সমীকরণ। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অভাব নেই। প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস-সামাদের জীবদ্দশায়ই অনেকেই নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু নৌকার কাণ্ডারি ছিলেন সামাদ। ফলে তাদের ভাগ্যে জোটেনি মনোনয়ন। এ কারণে এবার সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এদিকে প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হিসেব অনেকটাই পাল্টে গেছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও চায় আসনটি তাদের দখলে নিতে। এ কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দলের হাই কমান্ডে লবিংয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা এখনও উপনির্বাচন নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে দলের ‘সিগন্যাল’ পেলে এ আসনে প্রার্থী হতে রাজি আছেন একাধিক নেতা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। এদিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ২৫ জন।
মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনর (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (কয়েস) সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট জেলার পিপি ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলার যুগ্ম সম্পাদক কবির উদ্দিন আহমদ, দলের যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতানসহ ২৫ জন। এদের মধ্যে অনেকেই ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আগামী শনিবার (১২ জুন) দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া ও কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল। এছাড়াও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ওসমান আলীর নাম ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বুধবার (৯ জুন) জাপার বোর্ড সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিককে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এছাড়া বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নিলে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ জুন। ১৭ জুন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৩ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রচার শেষে আগামী ২৮ জুলাই ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফারজানা সামাদ চৌধুরী বলেন, আমি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। অতীতের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে আমি কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে তা অব্যাহত রাখতে এবং প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে মানুষের খেদমত করব। দলের নেতাকর্মীরা আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তাতে আমি অভিভূত।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট