মৌলভীবাজারে আব্দুস শহীদ এমপি’র বিকল্প প্রস্তাবে জেলা জুড়ে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২১, ৪:৩২ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার জেলা সদরে নাকি কমলগঞ্জ উপজেলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন হবে তা নিয়ে দেশে বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার পক্ষ-বিপক্ষ দলের মধ্যে গত ৩-৪ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি অনেকটা উত্তপ্ত মৌলভীবাজারের সুশীল সমাজ ও পেশাজীবি সংগঠন।
গত রোববার সম্পূরক বাজেট আলোচনায় নিজ সংসদীয় এলাকায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। তার এই বক্তব্যে জেলাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সেই বক্তব্য নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে ‘টক অব দ্যা জেলায়’- পরিণত হয়েছে। আর মন্তব্য পাল্টা মন্তব্যে ফেইসবুকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এর এধরণের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জেলা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অন্তরায় বলে মনে করছেন মেডিকেল কলেজের দাবিতে আন্দোলনকারী ও জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।
মেডিকেল কলেজ দাবির আন্দোলনে সক্রিয় থাকা মৌলভীবাজারে মেডিকেল কলেজ চাই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপ, সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ ও সচেতন নাগরিক ফোরাম এর নেতৃবৃন্দ বলছেন, মেডিকেল কলেজের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পক্ষে এমপি আব্দুস শহীদ নিজে স্বাক্ষর করেছেন। এমনকি তিনি দেশ ও বিদেশে (যুক্তরাজ্যে) জেলা শহরে মেডিকেল কলেজের দাবিতে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সাথে একাত্মতাও জানিয়েছেন। চলতি সংসদ অধিবেশনে তার অন্য দাবি উত্থাপন জেলাবাসীকে বিস্মিত করেছে।
জানা যায়, বিগত ২০১৭ সাল থেকে মৌলভীবাজার জেলা শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন চলছে । মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার দাবিতে দেশ ও প্রবাসে সভা সেমিনার, স্মারকলিপি প্রদান, জেলাব্যাপী গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, অনশন ও হরতালের মতো কর্মসূচি পালনসহ নানা আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো।
এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতৃবৃন্দ জানান জেলার ৪ জন এমপি, প্রয়াত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও অন্যান্য মন্ত্রী এই দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে আশ্বস্ত করেছিলেন। চিফহুইপ আ স ম ফিরোজ এর মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে জেলাবাসীর এই গুরুত্বপূর্ণ দাবি সম্পর্কে অবগত করেছেন। তারা সকলেই আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণানুযায়ী জেলা সদরে মেডিকেল কলেজ স্থাপন হবে।
অপরদিকে, তিনজন এমপি (সৈয়দা সায়েরা মহসীন, নেছার আহমদ ও জোহরা আলাউদ্দিন) জেলা সদরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার দাবি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন। সেই আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসাপাতাল পরিদর্শন করে তারা পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ জানান, কোভিড-১৯ এর কারণে তাদের সক্রিয় আন্দোলন কর্মসূচি কিছুটা স্থবির হলে তারা লিখিত ও মৌখিকভাবে নানা স্থানে উচ্চ পর্যায়ে ধরনা দিচ্ছেন। তারা বলেন, কি কারণে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি এমন রহস্যজনক বক্তব্য দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়।
সচেতন নাগরিক ফোরাম (সনাফ) এর সভাপতি আলহাজ মোয়জ্জেম হোসেন মাতুক, সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি খালেদ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি এম. মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি মেডিকেল কলেজের। সেই দাবিতে নানা আন্দোলনও চলমান। এখানে বিভাজন সৃষ্টি করে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া আর কিছু মিলবে না।
মৌলভীবাজারে মেডিকেল কলেজ চাই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপের এডমিন বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার মকিছ মনছুর ও ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন এমন বিভাজনমূলক বক্তব্য ও দাবি কখনও কাম্য নয়।