সিলেটে ভূমিকম্পে শাবিপ্রবির একাধিক ভবনে ফাটল, ক্যাম্পাসে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২১, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ সিলেটে ঝুঁকিতে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, ইউনিভার্সিটি সেন্টার ও শহীদ মিনার। সরেজমিন শাবিপ্রবি গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পের প্রভাবে একাডেমিক ভবন এ-এর নিচতলায় উত্তর-পূর্ব পাশের একটি দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। একাডেমিক ভবন ডি-এর গ্রাউন্ড ফ্লোর ও ১০২২নং কক্ষের ফ্লোর দেবে গেছে। এ ছাড়া লাইব্রেরি ভবনের নিচ তলায় ১০১নং রুমের পূর্ব পাশের একটি দেয়াল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সামনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি সেন্টারের মূল ফটকে সোনালী ব্যাংকের সামনে দক্ষিণ পাশে একটি দেয়াল, একটি কলামে ফাটল ধরছে। এ ছাড়া ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের ভেতরে দক্ষিণ পাশের একটি দেয়াল, ইউনিভার্সিটি সেন্টারের ভেতরে নিচ তলায় সাতটি কলামে এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বেশ কয়েকটি দেয়ালে ফাটল ধরেছে, দ্বিতীয় তলায় ছয়টি কলাম ও উত্তর-পশ্চিম পাশের প্রতিটি দেয়ালে ফাটল ধরেছে। তা ছাড়া দ্বিতীয় তলার ওয়াশরুমের দেয়াল খসে পড়ছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, দ্বিতলবিশিষ্ট ইউনিভার্সিটি সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনাহীনভাবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করায় এই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার কলামে ও ছাদে ফাটল দেখা দেওয়ায় বৃষ্টি হলেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। সিলেটে গত সোমবার সন্ধ্যায় পর পর দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর আগে গত ২৯ মে সকাল ও দুপুর মিলিয়ে মোট ৮ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যা রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ মাত্র ছিল ৪ দশমিক ১। এরপর ৩০ মে ভোর ৪টা ৩৬ মিনিটে ২ দশমিক ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া সিলেট নগরের ছয় তলাবিশিষ্ট দুটি ভবন হেলে পড়ায় বন্দরবাজারে বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবন ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি সেন্টারের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের ৮ আগস্ট দ্বিতীয় তলার নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় তলা এ সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ইউনিভার্সিটি সেন্টারে শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রক্টর অফিস, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের অফিস, ডে-কেয়ার সেন্টার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, ছাত্রদের সংগঠন ও গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটি ইউনিটে সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম বেদির দুটি দেয়াল, দ্বিতীয় বেদির দুই পাশে চারটি দেয়াল এবং মূল বেদির সামনে ও পেছনের অংশের দেয়াল ও ফ্লোরে ফাটল ধরেছে। মূল বেদির পেছনের অংশ ফেটে পশ্চিম দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেয়ালগুলো যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬ হাজার ৮৮৬ বর্গফুট জায়গা নিয়ে নির্মিত হয়।
এ বিষয়ে পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, গত ১০ বছরে সিলেট শহরে যে ভবনগুলো হয়েছে তা ১৯৯৬-এর বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়েছে। তবে এর আগের বেশিরভাগ স্থাপনা এ বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি। তাই এ ভবনগুলো অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ড. জহির বিন আলম আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবন ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারের কন্সট্রাকশন ঠিকভাবে করা হয়নি। তাই এ ভবনগুলোর ঝুঁকি আছে। তবে পরবর্তীতে যে ভবনগুলো হবে তা কোয়ালিটি সম্পন্ন করতে সম্পূর্ণ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হবে। এতে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। তিনি আরও বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্পের ফলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দেখা দেয়। সামনে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে, তাই সব দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।