লাখাইয়ে শালিস বৈঠকে প্রতারক উত্তম দেব দোষী সাব্যস্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২১, ১২:৩০ অপরাহ্ণ
সূর্য্য রায় লাখাই (লাখাই প্রতিনিধি):
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার স্হানীয় বুল্লা বাজারে র্যাব-পুলিশ ও মোবাইল কোর্টের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা আত্মসাৎ কারী চক্রের মূল হোতা উত্তম কুমার দেব অবশেষে ব্যবসায়ীদের কাছে ধরাশায়ী হলেন। নানা টালবাহানার পর বিচার শুরুর আগেই টাকা ফেরতের শর্তে আত্মসমর্পণ ও জরিমানা এবং ২ লক্ষ টাকা মুচলেকার শর্ত মেনে নিলেন।
বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপীমোহন শীল অভিযোগ করেন গত ৮ মে শ্রীমঙ্গল র্যাব ৯ এ তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে প্রতারণা করে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বুল্লা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রাঢ়িশাল গ্রামের প্রানেশ দেব ভুলুর পুত্র উত্তম কুমার দেব। ২৬ মে বুধবার বুল্লা বাজারে এ নিয়ে লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদের সভাপতিত্বে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে উত্তম কুমার দেব এর বিরুদ্ধে বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপীমোহন শীলের নিকট থেকে প্রতারণা করে আত্মসাৎকৃত ৪৫ হাজার টাকা ফেরত ও হয়রানি করার দায়ে আরো ৫ হাজার টাকা সহ মোট ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে রায় হয়। এছাড়া আরেক অভিযোগকারী রাড়িশাল গ্রামের অর্জুন রবি দাশের ৮ হাজার টাকা ও ফেরত দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
রায় প্রদানকালে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, উত্তম দেব প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে এবং বুল্লা বাজারে শাহজালাল বেকারি থেকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে নেয়া ৪০ হাজার টাকা, রাঢ়িশাল গ্রামের অর্জুন রবিদাসের নিকট থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে নেয়া ৮ হাজার টাকা সহ ইতিপূর্বে এই বাজারে ঘটে যাওয়া সকল প্রতারণার মূল হোতা উত্তম কুমার দেব। ভবিষ্যতে বুল্লা বাজারের কোন ব্যবসায়ীর সাথে এ ধরনের প্রতারণা করলে দু লক্ষ টাকা মুচলেকা রেখে উত্তমের বিরুদ্ধে বিচার অনুষ্ঠিত হবে বলে শর্ত রাখা হয়।
এছাড়াও ভবিষ্যতে উত্তম দেব বুল্লা বাজারে ব্যবসা করতে হলে বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে বলেও বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। এ সময় সালিশ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুড়াকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোল্লা ফয়সল, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, সাবেক চেয়ারম্যান আকরাম আলী, বুল্লা বাজার ব্যকস এর সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া, সাবেক সাঃ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আজনু ও জাকির হোসেন,ব্যবসায়ী মাসুকুর রহমান মাসুক, উপজেলা আঃলীগ যুগ্ম সাঃ সম্পাদক জুয়েল রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন চন্দ্র গোপ, করাব ইউপি আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল মালেক মেম্বার, লাখাই প্রেসক্লাব সভাপতি এডভোকেট আলী নোয়াজ, রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি আলহাজ্ব বাহার উদ্দিন, জাহারুল ইসলাম তাউস সহ বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। উল্লেখ্য এর আগে এ নিয়ে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, লাখাইয়ের বুল্লা বাজারে উত্তম কুমার দেব নামে এক ডিমের পাইকার বিভিন্ন সময় বুল্লা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিকট হতে পুলিশ, র্যাব ও মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ মে বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপীমোহন শীলের নিকট থেকে মামলা ও র্যাবের ভয় দেখিয়ে এ থেকে বাঁচানোর কথা বলে ৪৫ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন উত্তম। পরে এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এবং ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা তৈরি হলে প্রতারক উত্তম বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ এর দ্বারস্থ হন।
গত ১৮ মে সালিশের সিদ্ধান্ত হলে ধুরন্ধর উত্তম দেব সুকৌশলে সেই সালিশের তারিখটি টালবাহানা করে বানচাল করে দেন। পরবর্তীতে গত ২১ মে পুনরায় সালিশের দিন ধার্য করা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী মহল এবং নালিশকারী গোপীমোহন উপস্থিত হলেও রহস্যজনক কারণে শালিস বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন চতুর উত্তম। এতে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ীমহল ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান জানান ইতিমধ্যে তিনি নিজেও উত্তমের আরো কয়েকটি প্রতারণা সংক্রান্ত রেকর্ডিং শুনেছেন। ওই সালিশ বৈঠকে উত্তমের প্রতারণার শিকার রাঢ়িশাল গ্রামের অর্জুন রবিদাসের ছেলে অতীন রবিদাস জানান উত্তম কুমার দেব মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকেও ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ সময় ২৩ মে রবিবারের মধ্যে সালিশ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত উত্তম অংশগ্রহণ না করলে পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করার জন্য আগামী ২৮ মে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে উত্তম বহুমুখী চাপে পড়ে গতকাল ২৬ তারিখ সালিশে উপস্থিত হন।
উল্লেখ্য, উত্তম দেব লাখাই উপজেলার সাংবাদিকদের একাংশের একটি সংগঠন লাখাই উপজেলা প্রেসক্লাব এর সহ-সভাপতি পদের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সালিশের রায়ে উত্তম দেব দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে লাখাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম জানান তার বিষয়ে আগামী ৫ জুন আমরা বসে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব। এ ধরনের ঘটনায় গঠনতন্ত্রে কি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তাকে আমরা বহিষ্কার করব। এ ব্যাপারে জানতে লাখাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি