সুনামগঞ্জে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধা মশ্রব আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৭১ রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাউল শিল্পী মশ্রব আলী টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বলা যায় অনেকটা বিনা চিকিৎসায় এখন তিনি মৃত্যুশয্যায়।
দেশমাতৃকার টানে ১৯৭১সালে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মশ্রব আলী। গত ৫বছর ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে চিকিৎসার অভাবে বিছানায় পড়েছেন। এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুক্তিযোদ্ধা কর্নারের বিছানায়। উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো তিনি আরও কিছু দিন এই পৃথিবীর আলো বাতাসে সন্তানদের সাথে বাঁচতে পারতেন। কিন্তু টাকার অভাবে তা আর পারছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মশ্রব আলীর সনদ নং ১৭১৭৬২,মুক্তিবার্তা নং (লাল বই) ০৫০২০৮০১৯৫ এবং গেজেট নং ৩০৭৮। তিনি ৫সন্তানের জনক। তার মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর দু-ছেলের সাথে তিনি আছেন।
সোমবার অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা মশ্রব আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজস্ব আইডি থেকে অসুস্থ বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি জানান,টাকার অভাবে আমার বাবাকে ভাল চিকিৎসা করাতে পারছি না। আর চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না এমন প্রশ্ন রেখে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট। আশরাফুল ইসলাম আরও জানান, ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে আমার বাবাকে চিকিৎসা করে এখন আর পারছি না টাকার জন্য।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবার থেকে জানা যায়, জেলার তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট বাউল শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা মশ্রব আলী দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি বেহেলাতে সুর তুলে গান গাইতেন। দেশের জন্য জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন তার এক ভাই শহীদও হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। মাঝে মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতেন। পরিবারের লোকজন বাড়িতে থাকা কৃষি শ্রমিকসহ সবাই গভীর রাত পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে তার মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতেন।
এসব গল্পের শেষে কখনো কখনো নিজের জীবনের হতাশার গল্পও ফুটে উঠতো। তবে শেষ জীবনে এসে পরিবার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হতাশার গল্পটি সেভাবে আর নেই। সংসার চালাতেও তাকে আজীবন যুদ্ধ করতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য তিনি গান ছাড়া কোন কাজ জানতেন না। যদিও ১৯৯০সালের পর তাকে আর গান গাইতে দেখা যায়নি। থাকতেন সবসময়ই পরিপাটি হয়ে। উনার এ সকল আচরণ সবাইকেই গভীরভাবে মুগ্ধ করতো। আচরণ ও কাজে তিনি ছিলেন নিখাদ একজন ভদ্রলোক। সেই মানুষটি এখন বার্ধক্যসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রৌজ আলী জানান, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তা মেনে নেয়া যায় না। আমি আমার সহযোদ্ধার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানাই।