সিলেটে দুই সন্তানসহ মা হত্যা: কারাগারে যাচ্ছেন না খুনি আবাদ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৭:৫২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে দুই শিশুসন্তানসহ মাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সৎ ছেলে ঘাতক আহবার হোসেন। শনিবার সন্ধ্যায় মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন খানম নীলার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘাতক আহবাবকে আদালতে তোলার পর তিনি দায় স্বীকার করে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে কারো প্ররোচনা রয়েছে কি না সে বিষয়ে তিনি বলেননি।
গত শনিবার মহানগর পুলিশ ওই আহবাব হোসেন আবাদের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কিশোরের বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়। তবে আবাদের বাবা আবদাল হোসেন খান জানান, তাঁর ছেলের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তার জন্ম ২০০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও ওই আবাদ বলেছে, তার বয়স ১৭ বছর।
আইন অনুযায়ী- অপরাধীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে শিশু আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর এলাকার মীর মহল্লা গ্রামে ৯নং বাসায় সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার পূর্ব মুড়িয়া ইউনিয়নের আষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন খানের ২য় স্ত্রী রুবিয়া বেগম চৌধুরী, মেয়ে জান্নাতুল হোসেন মাহি ও তাহসান হোসেন খানকে কুপিয়ে হত্যা করেন তার সৎ ছেলে আহবাব হোসেন। তিনি প্রথম স্ত্রীর সন্তান। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকেই ঘাতক আহবাবকে আটক করে পুলিশ। পরে শুক্রবার রাতে নিহত রুবিয়া বেগম চৌধুরীর ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে আনোয়ার হোসেন জানান, দুই তিন মাস ধরে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন সৎ ছেলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। তার এই কাজে সতীন সুলতানা বেগম রুমি প্ররোচনা দিতেন। চার মাস আগে আহবাব তার বাবাকে দোকানের কাজে সহযোগিতার জন্য সিলেটে আসেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি বাসায় ফিরেন। রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার বোন রুবিয়া বেগম, তার মেয়ে মেয়ে জান্নাতুল হোসেন মাহি ও তাহসান হোসেন খানকে ছুরিকাঘাত করেন ও খুন্তি দিয়ে এলোপাতারি কোপাতে থাকেন। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা বাসায় আসেন। এ সময় তাদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে বিছনায় আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ার পর আমার বোন ও ভাগ্নি মাহিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাগ্নে তাহসানেরও মৃত্যু হয়।
মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা শুক্রবার রাতেই মামলা করেছি। এজাহার দাখিলের সময় আসামি আহবাবকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় সেই বিষয়টি উল্লেখ করতে দেয়া হয়নি।
এদিকে শনিবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন খুন মামলা এজহারনামীয় ১নং আসামি আহবাব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সেখানে ঘাতক আহবাবকে কোথায় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বলা হয়নি।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, সৎ মা ও ভাই-বোনকে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করেন আহবাব। এ ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।