সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় তেল সরবরাহ কম হওয়ায় বিভাগের ১১৪টি পেট্রোল পাম্প বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে নিরবচ্ছিন্ন রেলের তেলবাহী ওয়াগন না আসায় এবং সিলেটের গ্যাস ফিল্ডগুলোর খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট বিভাগ পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় ৭০টি পাম্প রয়েছে। এসব পাম্পে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা প্রতিদিন ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। কিন্তু বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার জ্বালানি তেল আসছে। সিলেটে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে ওয়াগনে করে। তাই ওয়াগন সংকটে পাম্পগুলোকে প্রায় এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। এছাড়া স্থানীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোয় জ্বালানি তেল উৎপাদন ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে কিছুদিনের মধ্যে সিলেটের অনেক পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির পর সিলেটে আর তেলবাহী ওয়াগন আসেনি। যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার আবদুল বাকী জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের ওয়াগন নিয়মিত না আসায় তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াগন নিয়মিত এলে সংকট আর থাকবে না। তিনি আরও বলেন, চালান নিয়মিত না এলে হয়তো ডিজেলের সংকট প্রকট হবে না। তবে পেট্রোল, কেরোসিন ও অকটেনের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। কিন্তু পরিবহণ করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ২৪টি ওয়াগন দিলেও পরে তা কমিয়ে ২০টি ওয়াগনে তেল সরবরাহ করা শুরু হয়। ফেঞ্চুগঞ্জের রেল দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে বর্তমানে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত রেলের ২০টি ওয়াগন আসছে। শায়েস্তাগঞ্জে আসার পর ১০টি করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে তেল পরিবহণে বেশি সময় লাগছে।
সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, রেলের ওয়াগন চলাচল নানা কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়ায় এখানকার অধিকাংশ পাম্পে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ না হলে এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যেত। নগরীর মেন্দিবাগস্থ বেঙ্গল গ্যাসোলিনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ব্যারিস্টার রিয়াশাদ আজিম হক জানান, প্রতিদিন তাদের পাম্পে তেলের চাহিদা ১৮ হাজার লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার। এ অবস্থায় ভৈরব থেকে গাড়ি পাঠিয়ে ডিজেল আনা হলেও ভৈরব ও আশুগঞ্জে কোম্পানির ডিপোগুলোয় পেট্রোল-অকটেন নেই। এ কারণে ওয়াগনের ওপর সব নির্ভর করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার জানান, সিলেটে ডিজেল সরবরাহ ওয়াগননির্ভর হওয়ায় প্রায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়া গ্যাস ফিল্ডগুলোর খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকায় সংকট কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। সিলেটে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটারেরও বেশি জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল আসছে। অভিযোগ করে জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সিলেটের গ্যাস ফিল্ডগুলোর খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানসহ ছয় দফা দাবিতে ডিসেম্বরে পাম্পগুলোয় ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছি। মার্চের ভেতরে সমস্যার সমাধান না হলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, সিলেটের পাম্পগুলোয় নিুমানের তেল সরবরাহ করা হয়। আগের মতো গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদিত তেল আমাদের দিতে হবে। দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে মার্চের পর কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে আমরা বাধ্য হব।