সিলেটে সমঝোতা বৈঠকের অপেক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৪:৫০,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে একটি ‘সমঝোতা’ বৈঠকের অপেক্ষায় সবাই। শ্রমিকরাও চাইছেন- দাবি মেনে নিলে তারা ঘোষিত কর্মসূচি থেকে সরে যাবেন। মেয়র আরিফও চান ঘটনার ইতি ঘটাতে। যা কিছু করেছেন তিনি সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে করেছেন। ফলে এ নিয়ে সমঝোতার ডাক দিয়েছেন সিলেটের ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল, মখন মিয়া চেয়ারম্যানসহ ব্যবসায়ী নেতারা। অপরদিকে পুলিশও রয়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। ইতিমধ্যে পুলিশ শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলা রেকর্ড করেছে। শ্রমিকদের কাঠগড়ায় এখন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তাকে প্রধান আসামি করে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ শ্রমিকদের মামলা রেকর্ড করেনি। শ্রমিকদের ফিরিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সিলেটের পরিবহন শ্রমিকরা। গত বুধবার সিলেটের চৌহাট্টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে উত্তর চৌহাট্টার পরিবহন শ্রমিকদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের আগে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সেখানে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি ঘটাতে চাইলেও পারেননি। বরং সংঘর্ষের পর শ্রমিকরা চৌহাট্টা থেকে চলে যায়। এখন সেখানে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ চলছে। এই অবস্থায় সিলেটের পরিবহন শ্রমিকরা দুই দফা দাবিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে সোমবার থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে- সিলেটের পরিবহন শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তাদের দাবি না মানলে সোমবার থেকে সিলেট জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। কর্মবিরতির ডাক দেয়া হলেও সেটি ধর্মঘটের আদলেই পালন করা হবে। এতে করে ভোগান্তি বাড়বে। পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানিয়েছেন- রোববার রাত ৮টায় সিলেট সিটি করপোরেশনে সমঝোতার আহ্বান করা হয়েছে। এই সমঝোতা বৈঠকে তারা যাবেন। এখন তাদের দাবি হচ্ছে দু’টি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে চৌহাট্টায় গাড়ি স্ট্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয়া ও মামলা প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। এই দুই দাবি মানা হলে তারা কর্মবিরতিতে যাবেন না।
সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে তাদের শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এর আগে কখনো সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের উপর এভাবে হামলা হয়নি। এ নিয়ে সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এদিকে আজকের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মো. ময়নুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়- মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ৩-৪ বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তিনি স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করার আশ্বাস প্রদান করেন। স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা না করে বিনা নোটিশে গত বুধবার দুপুর ১২টার সময় নগরীর চৌহাট্টস্থ দীর্ঘ ৩০ বছরের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড মেয়রের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদের জন্য যান।
সে সময় শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাছনাত, প্রচার সম্পাদক হারিছ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজনসহ আরো স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মেয়রকে স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করার কথা বললে মেয়র খারাপ আচরণ করেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ গাড়ি রেখে সব শ্রমিককে নিয়ে চলে যান। সেই সময় সিটি করপোরেশনের পোশাকধারী শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে শ্রমিক ইউনিয়নের ২০টি গাড়ি ও গাড়ির ইঞ্জিন এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এতে আনুমানিক বিশ লাখ টাকার ক্ষতিসাধিত হওয়ার পর উল্টো শ্রমিক ইউনিয়নের উল্লিখিত ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শ্রমিকবৃন্দকে অভিযুক্ত করে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ কোতোয়ালি মডেল থানায় এজাহার করতে চাইলে ওসি জানান, উপরের নির্দেশ ছাড়া এজাহার গ্রহণ করা হবে না। গাড়ি ভাঙচুরে বিশ লাখ টাকা ক্ষতিসাধিত হওয়ায় সাধারণ শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।