ওসমানী হাসপাতালে নামেই হেল্প ডেস্ক, কাজে কেউ নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫২:২৩,অপরাহ্ন ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘অনুসন্ধান’ ডেস্ক চালু করলেও সেখানে পাওয়া যায় না কোনো তথ্য।
সিলেট বিভাগে উন্নত চিকিৎসার সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সরকারি এই হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বিভিন্ন ধরণের তথ্য না পেয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো এই হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ‘অনুসন্ধান’ ডেস্ক চালু করলেও সেখানে পাওয়া যায় না কোনো তথ্য। বেশিরভাগ সময় খালি থাকে হেল্প ডেস্কটি। কাউকে খোঁজে পাওয়া যায় না এই ডেস্কে। মাঝে মধ্যে কেউ এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। ফলে হাসপাতালে সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তির দুর্ভোগ লাগব হচ্ছেই না।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে এই হেল্প ডেস্ক চালু হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই ডেস্কে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কর্মচারীরা। এই সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের সবচেয়ে বড় এই হাসাপাতালে বহির্বিভাগ, প্যাথলজি, রোগীর ভর্তি তথ্য ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের অবস্থান জানাতে একটি হেল্প ডেস্ক রয়েছে। মাস দেড়েক আগে এই ডেস্কটিকে ‘অনুসন্ধান’ লিখে আরো উন্নত করে সাজানো হয়। হাসাতালের প্রধান সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় প্রথমেই চোখে পড়ে এই অনুসন্ধান ডেস্কের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই ডেস্কে দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করেন দুইজন কর্মচারী। সিডিউল বন্টন করে দেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মাস্টার। কিন্তু সেখানে তথ্য প্রদানকারী কাউকে চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে সকাল বেলা একজন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বেশিরভাগ সময় ডেস্কটি খালি থাকে।
একটি সূত্র জানায়, অনুসন্ধান ডেস্কে একজন পুরুষ ও একজন নারী দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মাস্টারের বিরুদ্ধে ওই নারী যৌন হয়রানীর অভিযোগ তোলার পর তাকে অনুসন্ধান ডেস্কে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ওই নারী সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ভুক্তভোগী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষা গ্রামের বাহার উদ্দিন বলেন, অনেক দূর থেকে এসেছি চিকিৎসা নিতে। এখানে এসে কয়েকবার নিচতলা থেকে পাঁচতলা উঠানামা করেছি শিশু ওয়ার্ড খুঁজে পাইনি। হেল্প ডেস্কে অনেকবার এসেছি। কিন্তু পাইনি। পরে এক আনসার সদস্য আমাকে ওয়ার্ডটি দেখিয়ে দিয়েছেন।
হাসপাতালে নবজাতকের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রতে ভর্তিকৃত শিশুর অভিভাবক মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী গ্রামের সফিকুর রহমান জানান, হেল্প ডেস্কের সামনে আজ তিনদিন থেকে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করছি। কাউকে ওই ডেস্কে দায়িত্ব পালন করতে দেখি নি।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া নোয়াগাও গ্রামের জনি মিয়া জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে একটা মানুষও ভালো করে কথা বলে না। হেল্প ডেস্কে আসলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায় না। সেবা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকেই জানতে হয় কোন ওয়ার্ড কোনদিকে।
সিলেট নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের জানান, হাসপাতালের এই অনুসন্ধান ডেস্কটি চালুর পর থেকেই কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় একজনকে পাওয়া গেলেও তার দুর্ব্যবহার দেখলেও কেউ কাছে আসে না। নামেই এই হেল্প ডেস্ক।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, এই হেল্প ডেস্কটি সম্প্রতি চালু করা হয়েছে। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখানে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দুইজন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করার কথা। আগামীতে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটির সময় বাড়ানো হবে। কিন্তু অনুসন্ধান ডেস্ক খালি থাকে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
তিনি বলেন, এই ডেস্কের সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেম সংযুক্ত করা হবে। আগামীতে এখান থেকে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের তথ্য প্রদান করা হবে। যাতে দূর দূরান্ত থেকে এসে কাউকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।