আরিফের অ্যাকশন, পরিবহন শ্রমিকদের হুমকি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ অ্যাকশনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নগর সাজাতে কাজে বাধা দেয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে চৌহাট্টায় নেই শ্রমিকরা। ওই এলাকায় পুরোদমে চলছে সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজ। মেয়রকে পাল্টা হুমকি দিয়েছে সিলেটের পরিবহন শ্রমিকরা। রোববার বিকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছে- যদি এই সময়ের মধ্যে চৌহাট্টায় বিকল্প গাড়ি স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা ও দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হয় সোমবার থেকে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে। সিলেট নগরের পুরনো জঞ্জাল দূর করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। একেক করে কাজ শুরু করছেন আর শেষও করছেন মেয়র আরিফ।
এজন্য তিনি প্রশংসিতও হচ্ছেন। ফুটপাথ দখলমুক্ত হওয়ার পর এখন তিনি রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ড্রেন নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছেন। সিলেটের চৌহাট্টা এলাকায় প্রায় ৩৫ বছর ধরে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছিলেন মাইক্রোবাস চালকরা। রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে তারা কোনো আপত্তি না জানালেও রাস্তা ছাড়তে তারা মেয়রের কাছে বিকল্প স্ট্যান্ড দাবি করেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে মাজারের পাশে তারা বিকল্প স্ট্যান্ড চাইলেও মেয়রের পক্ষ থেকে সাড়া দেয়া হয়নি। কয়েক দিন ধরে এসব নিয়ে বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত বুধবার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর পর থেকে চৌহাট্টা ছাড়া পরিবহন শ্রমিকরা। সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেটে তিনটি মামলা করা হয়েছে। বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি ও সিসিকের প্রকৌশলী বাদী হয়ে আরো ১টি মামলা করেন। পৃথক অভিযোগে দায়েরকৃত ৩ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩২৮ জনকে। আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তারকৃত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ফয়সল আহমদ ফাহাদকে আসামি করে অস্ত্র আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা দান ও হামলার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় এসআই আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে ১৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় অজ্ঞাত আরো ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা প্রদান, কাউন্সিলর ও সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা করেন সিসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবব্রত দাস। তিনি ১০ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। এই মামলায় অজ্ঞাত আরো ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই অবস্থায় বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা এ ঘটনার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে চৌহাট্টা এলাকায় স্ট্যান্ড নির্মাণ করে দেয়ার দাবি উপস্থাপন করেন। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি তুলেন। এই দাবিতে তারা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে রোববার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন-রোববারের মধ্যে তাদের এই দাবি মানা না হলে সোমবার থেকে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেবে।
সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, তারা তাদের দাবিতে অনড়। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি না মানলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। তাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। উত্তর চৌহাট্টা মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের সভাপতি অরুণ দেবনাথ দাবি করেছেন- হামলাকালে তাদের স্ট্যান্ডের শ্রমিকদের ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এর বাইরে আরো ৪টি প্রাইভেট গাড়ি ও সুনামগঞ্জের আরো দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তারা এখন চৌহাট্টায় নেই। এই সুযোগে মেয়র দুই ফুট উঁচা করে ফুটপাথ নির্মাণ করছেন।
এদিকে- মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিকালে চৌহাট্টা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা ছিলেন। মেয়র জানিয়েছেন, নগরকে সাজাতে হলে অনেক কিছুই করতে হবে। ব্যবসায়ীরা ছাড় দিচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকদের ছাড় দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে সিলেটকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।