কানাইঘাটে প্রতিষ্ঠাতাদের বাদ দিয়ে স্কুলের কমিটি, এলাকায় ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাটের রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত বীরদল অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। স্কুল প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের বাদ দিয়ে এবং ‘এসএসসিতে অকৃতকার্য’ এক ব্যক্তিকে সভাপতি করার প্রক্রিয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে স্কুলের এডহক কমিটি গঠন করা হয়। তখন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ইচ্ছায় স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্থানীয় অভিভাবকদের পাশ কাটিয়ে পাশের ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমাম উদ্দিনকে সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া হয়। এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আবারও বিরোধ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সিলেট শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবারে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন,‘বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের পছন্দের ব্যক্তি ‘ইমাম উদ্দিনকে’ এডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়নের প্রস্তাব করেছেন বলে তারা জেনেছেন। তার বিরুদ্ধে এসএসসি’র সনদপত্র জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। কয়েক বছর আগে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পরিচালক পদ বাতিল হয়।’
তারা আরও বলেন, ‘বিগত এডহক কমিটিতে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তিনি সভাপতি মনোনীত হলেও তার অবহেলা ও অযোগ্যতায় স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত বহুতল ভবনের কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি স্কুল প্রতিষ্ঠার বিগত দুই যুগেও ইমাম উদ্দিনের কোন অবদান নেই।’
কোনধরণের সভা না ডেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের স্বার্থে ইমাম উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছেন উল্লেখ করে এলাকাবাসী আরও বলেন, এতো অল্পশিক্ষিত একজন ব্যক্তিকে সভাপতি না করে ক্লিন ইমেজের জ্যেষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
অভিযোগে স্বাক্ষর করে রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মালিক চৌধুরী, গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য জুনাব আলী, আব্দুর রব, আজমল হোসেন, ফয়জুল আমীন ও মো. নুরুল ইসলামপ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে স্থানীয় বীরদল আগকুপা গ্রামের কয়েকজন শিক্ষিত যুবক গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এতোদিন স্কুল পরিচালনার ব্যয়ভার বহন কষ্টসাধ্য হলেও থেমে যাননি তারা। ২১ বছর পর গত ২০১৯ সালে নি¤œমাধ্যমিক (৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণি) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হলে আশার স ার হয়।
কিন্তু, এরপরই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। জামায়াত মতাদর্শের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজমল হোসেন জানান, ‘২০২০ সালের জুলাই মাসে স্কুলের এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের কাউকে রাখেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আবারও কমিটি গঠনের লক্ষে পুরাতন কমিটির সদস্য, সিনিয়র শিক্ষক এম এ সেলিমকে বাদ দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনুগত জুনিয়র শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।’
এছাড়া অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে নিজের ঘনিষ্ঠজন মাওলানা হাবিবুর রহমানের মনোনয়ন সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন তিনি। অন্যদিকে, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের নাম ব্যবহার করে সভাপতি হতে ইমাম উদ্দিনও মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ তাদের।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, শালিস ব্যক্তিত্ব আব্দুল মালিক চৌধুরী জানান, স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত ইমাম উদ্দিনের কোন অবদান নেই। বরং, তার কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তার পরিবর্তে এলাকার গণ্যমান্য, সজ্জন কোন ব্যক্তিকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক।
বীরদল পূর্ব (আগকুপা) গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি আব্দুর রব রবই বলেন, অগ্রগামী স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় আমরা কাউকে পাইনি। গ্রামের প্রতিটি ঘরের মানুষ খড়কোঠা দিয়ে স্কুলঘর দাঁড় করিয়েছে। আগকুপা গ্রামের যেসব শিক্ষিত যুবক আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে আজ তাদেরকে বাদ দিয়ে সবকিছু চলছে। এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য, গ্রামের মুরব্বি জুনাব আলী বলেন, স্কুলটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু, শুরুতেই যে অবস্থা শুরু হয়েছে তাতে স্কুলের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা হতাশ। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষাবোর্ডকে জানিয়েছি।