সিলেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ১০ হাজার সিএনজি অটোরিকসা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১:৩৮ অপরাহ্ণ
কাউসার চৌধুরী:
সিলেটের সড়ক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ১০ হাজার পেট্রোল ও সিএনজি চালিত অটোরিকসা। ৫ বছর আগেই এ সকল অটোরিকসা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। আইন অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব অটোরিকসা স্ক্র্যাপ (অকেজো) হওয়ার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখনো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিস্ফোরক পরিদর্শকরা বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। আর শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতার কারণেই মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকসার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
তবে বিআরটিএ সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়ছার সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রণালয় নীতিমালা করার পরই মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসা অকেজো করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিআরটিএ সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিআরটিএ কার্যালয় ২০০০ সালে সর্বপ্রথম থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশন দেয়। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেবল ৮ হাজার ৩৪টি থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশন দেয় সিলেট বিআরটিএ। ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোল ও সিএনজি চালিত ৯ হাজার ৮০৭ টি সিলেট থ-১১ সিরিয়ালের অটোরিকসা রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। কেবল এ সকল অটোরিকসাই নয়; ২০০৬ সালের পরেও সিলেট থ-১১ সিরিয়ালের সিএনজি অটোরিকসার রেজিস্ট্রেশন দেয় সিলেট বিআরটিএ। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার বেশ আগে এ সকল অটোরিকসা ভারত থেকে আমদানি করা হয়। বাজাজ কোম্পানির এই থ্রি হুইলার সর্বপ্রথম সিলেটের সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনের জন্যে নামে।
বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এ সকল সিএনজি অটোরিকসা রেজিস্ট্রেশনের সময় মেয়াদ নির্ধারিত করা হয়েছিল ৯ বছর। পরে মালিক ও চালকদের দাবির প্রেক্ষিতে ৩ দফায় অটোরিকসাগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ বছর করে বিআরটিএ। সেই আইন অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনকৃত পেট্রোল ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে পার করেছে। প্রায় ১০ হাজার অটোরিকসার মেয়াদ ৫ বছর আগেই শেষ হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, পেট্রোল ও সিএনজি চালিত অটোরিকসার মেয়াদ থাকে সাধারণত তৈরির সময় থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। সিলিন্ডারের মেয়াদও ১৫ বছর। সিলিন্ডার অটোরিকসায় সংযোজনের পর প্রতি ৫ বছর পর পর সিলিন্ডার রি-টেস্ট করার কথা রয়েছে। সিলিন্ডার রি-টেস্ট এর সার্টিফিকেট না থাকলে ঐ অটোরিকসার কাগজপত্র নবায়ন করবে না বিআরটিএ। কিন্তু জাল রি-টেস্ট সার্টিফিকেট দিয়েই সড়কে চলাচল করছে অনেক সিএনজি অটোরিকসা।
জানা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডারের প্রতি বর্গইঞ্চিতে যখন ৩ হাজার পাউন্ড চাপে গ্যাস লোড দেয়া হয়; তখন সিলিন্ডারটি বিধ্বংসী বোমার মতো হয়ে যায়। গ্যাস লোড বা ঢোকানোর সময় সিলিন্ডার ও গ্যাস উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডারটি সেই ভয়ংকর চাপ ও তাপ যথাযথভাবে সহ্য করতে না পারলে সিলিন্ডারটি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ওঠে। সিলিন্ডারের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বিআরটিএকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় নীতিমালা তৈরি করে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসা অকেজো করে দেয়া হয়। প্রথমে সিএনজির অটোরিকসার মালিক নিজে তার সিএনজি অটোরিকসাটি বিআরটিএর নিকট জমা দেবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকসাটি স্ক্র্যাপ করার পর ঐ সিএনজির মালিককে নতুন আরেকটি সিএনজি অটোরিকসার রেজিস্ট্রেশন দেবে বিআরটিএ। ঢাকার পর বর্তমানে এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও সিলেটের মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসার ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর ফলে লক্কর-ঝক্কর মার্কা মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসা দিয়েই যাত্রী-সাধারণকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসার মধ্যে জোড়াতালির শেষ নেই। এমনকি নিচের বডির মধ্যেও অসংখ্য জোড়া আর জোড়া। জোড়াতালির পরই রং দিয়ে তা ঢেকে দেয়া হয়। পরিবহন আইন অনুযায়ী, এ সকল মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসা চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান চালনা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৮ ধারার অপরাধ।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সিলেটের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মোঃ আলিম উদ্দিন সিলেটের ডাককে বলেন, রি-টেস্ট করা হলে হয়তো বোঝা যাবে সিলিন্ডার ঠিক আছে কিনা। কিন্তু মেয়াদ চলে গেলে এটি শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারটি জীবনের জন্যেও হুমকি হতে পারে।
সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকসা শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিঃ নং ৭০৭) সভাপতি মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০০ টি সিএনজি অটোরিকসার রেজিস্ট্রেশন হয়। এগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে চলে গেছে। নীতিমালা করে মেয়াদোত্তীর্ণগুলোর স্ক্র্যাপ করা যেতে পারে। এটি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবে এটি করা হচ্ছে না। এমনকি বিআরটিএ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার ও মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সভাপতি নিশারুল আরিফ সিলেটের ডাককে বলেন, সিএনজি অটোরিকসার নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন দেয় বিআরটিএ। মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসার বিষয়টিও বিআরটিকেই দেখতে হবে। তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারটিতো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্যে বিআরটিএকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি।
বিআরটিএ সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়ছার সিলেটের ডাককে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকসার ব্যাপারে ইতোপূর্বে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো ফল আসেনি। করোনার কারণে এর কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই সভা করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা করে দিবে। আমরা নীতিমালা বাস্তবায়ন করবো। স্ক্র্যাপ আমরাও চাই। ঝুঁকিপূর্ণ যান কারো কাম্য নয়।সুত্রঃসিলেটের ডাক