বসন্ত আর ভালোবাসায় ডাকছে যে শিমুল বাগান!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
শীতের শেষে আর গ্রীষ্মের আগমনের মধ্যবর্তী সময়টা বসন্তকাল। এ সময় গাছের শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে প্রকৃতি তার নিবিড় পরিচর্যায় মেতে উঠে। এদিকে বসন্ত আর শিমুল ফুল যেন সমার্থক। বসন্তে রক্তিম শিমুল ফুলের লাল পাপড়ি নব পল্লবে সেজে আহবান জানাই প্রকৃতিপ্রেমীদের।
ফাগুনে দেশের সর্বত্র-ই শিমুল ফুলের দেখা মিলে কিন্তু যতদূর চোখ যায় সারি সারি সহস্রাধিক শিমুল গাছ এবং গাছে গাছে রক্তিম আভায় ফুটে উঠা শিমুল ফুলের লাল পাপড়িতে চোখ আটকে যায়, এমন দৃশ্যপটের অবতারণা ঘটবে কেবল বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামে ২ হাজার ৪ শতক জমিতে গড়ে তোলা জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান ঘিরে।
২০০৩ সালে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন যিনি একজন পুরোদস্তুর শিক্ষানুরাগী-ই ছিলেন না, পাশাপাশি ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমীও। তাঁর এ প্রকৃতিপ্রেম থেকেই একান্ত নিজ প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তোলেন আজকের এই শিমুল বাগান। কালের পরিক্রমায় এ শিমুল বাগান দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আজ বিদেশেও সমানতালে তার সৌন্দর্য গুণে সমানভাবে সমাদৃত।
বাংলার আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেক টিলার কূলঘেষা মায়ার নদী যাদুকাটা, ওপারে মেঘালয় পাহাড়ের হাতছানি। এ দুইয়ে মিলে যেন প্রকৃতির এক শৈল্পিক সৃষ্টি। সেই সাথে প্রকৃতির এ শৈল্পিকতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যাদুকাটা নদীর কূলঘেষে গড়ে তোলা সারি সারি শিমুল গাছ। ফাল্গুনের হাত ধরেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটে। আর এ ফাল্গুনে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানকে কেন্দ্র করে দেশে- বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীদের ছুটে আসতে দেখা যায়। অবশ্য প্রতিবছরই এ সময়টাতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয় শিমুল বাগান ও তার আশপাশের এলাকা।
কিন্তু এবারের পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হতে যাচ্ছে যে কারনে প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যে সজ্জিত জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান ঘিরে পর্যটকদের বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা ও ব্যাপক আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আর শিমুল বাগান ঘিরে তাহিরপুরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে প্রকৃতিপ্রেমীদের ব্যাপক আগমন ঘটবে, এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে-ই শিমুল বাগান ঘিরে গত ৪-৫ দিন ধরেই স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে তাহিরপুরে পর্যটকদের আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে সারি সারি সহস্রাধিক শিমুল গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। বাগানের সবকটি গাছে পরিপূর্ণ ভাবে ফুল ফুটতে আরও ৩-৪ দিন সময় লাগবে হয়তো। তখন বাগানে যতদূর চোখ যায় কেবল দেখা মিলবে শিমুলের রক্তিম আভা। আর এ দৃশ্যের অবলোকন করতে ২-৪ দিন অন্তত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।
তবে শিমুল বাগানে আজ ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতও ছিল লক্ষ্যণীয়। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ নানান পেশা ও বয়সী লোকজনের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বাগানে আগতদের ঘিরে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যস্ততা ছিল শিমুল ফুল দিয়ে মালা, ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যেও। আর এসব আয়োজন ফাগুনে রক্ত রাঙা শিমুল বাগানের সৌন্দর্য অবলোকনে ভ্রমণপিয়াসীদেরকে আহবান জানাচ্ছে সাড়ম্বে!