সিলেটে তাহমিনার ভার্চ্যুয়াল প্রেম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:৩৯,অপরাহ্ন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ওয়েছ খছরু:
স্বামী কবির মিয়া সৌদি প্রবাসী। দেশে দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে বসবাস করেন প্রবাসী বধূ তাহমিনা আক্তার। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। মাঝপথে মোবাইল ফোনের ইমোতে একই এলাকার আরেক সৌদি প্রবাসী নুর মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় তাহমিনার। এরপর থেকে নুর মিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল প্রেম গড়ে উঠে। সেই প্রেমের সূত্র ধরে সম্প্রতি দেশে আসা নুর মিয়ার সঙ্গে সন্তান, স্বামীর ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন তাহমিনা আক্তার। এ নিয়ে এলাকায় নানা ঘটনার অবতারণা ঘটে। স্থানীয় সালিশদাররা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন।
কিন্তু এতে লাভ হয়নি। এখন তাহমিনার ঠাঁই হয়েছে নিরাপত্তা হেফাজতে। সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার পর এখন স্বামীর ঘরে সন্তানদের সঙ্গে বসবাসের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাহমিনা। দিচ্ছেন হুমকিও। সিলেট শহরতলীর কেমিদপুর ভুলতা গ্রামের সৌদি প্রবাসী কবির মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। তার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে। প্রবাসী কবির ও তাহমিনার ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সৌদি প্রবাসী নুর মিয়ার বাড়িও একই এলাকার ভগতিপুরে। নুর মিয়ার সৌদি আরবে থাকার সময়ই কবির মিয়ার স্ত্রী তাহমিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেটি জানতো না কেউ। গত ৯ই জানুয়ারি হঠাৎ করে স্বামীর ঘর থেকে দুই সন্তানকে রেখে নিখোঁজ হয় তাহমিনা আক্তার। তার এমন নিখোঁজে রহস্য দেখা দেয় এলাকায়। এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন কবিরের মা সফিনা বেগম সহ পরিবারের সদস্যরা। তারা খোঁজখবর নিয়েও তাহমিনার ব্যাপারে তথ্য জানতে পারেননি। তাহমিনা নিখোঁজের ঘটনার পর শাশুড়ি সিলেটের জালালাবাদ থানায় জিডি দায়ের করেন।
এদিকে পরে জানা যায়, সৌদি ফেরত প্রেমিক নুর মিয়ার সঙ্গেই ঘর ছেড়েছে তাহমিনা। নুর মিয়ার হাত ধরেই সে স্বামীর ঘর ও সন্তানদের ছেড়ে পালিয়েছিল। চলে গিয়েছিল নুর মিয়ার বাড়িতেও। বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি স্থানীয় সমাজপতিরা। নুর মিয়ার পরিবারও এ নিয়ে বিব্রত হয়। পরে তারা তাহমিনাকে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরপুরুষের সঙ্গে গৃহছাড়া তাহমিনাকে ঘরে তুলতে রাজি নয় শাশুড়ি ছফিনা বেগম। বরং তিনি তাহমিনার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলে জালালাবাদ থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। একই সঙ্গে তিনি তাহমিনাকে ঘরে তুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তাহমিনা আশ্রয় নেন স্থানীয় মোগলগাঁও ইউপি মেম্বার বাবুল মিয়া ও ফজলু মিয়ার কাছে। দীর্ঘ ২১ দিন দুই মেম্বারের জিম্মা শেষে অবশেষে গত ১লা ফেব্রুয়ারি রাতে ফিরে যান স্বামী কবির মিয়ার বাড়ি। কিন্তু এর আগেই স্বামী কবির মিয়া তাকে তালাক দিয়ে দেন। এদিকে কবিরের বাড়িতে ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে হুলস্থুল পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশও যায় সেখানে। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সব কূল হারানো তাহমিনাকে শেষে আদালতের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিরাপত্তা হেফাজতে। বৃহস্পতিবার বোনের জিম্মায় মুক্তি পেয়েছেন তাহমিনা আক্তার। মুক্তি পেয়েই তিনি দুই সন্তানের জন্য হুমকি দিয়েছেন বলে দাবি করেন শাশুড়ি সাফিয়া বেগম।
তিনি জানান, ‘তাহমিনাকে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে। এত ঘটনার পর তাহমিনাকে ঘরে তোলার প্রশ্নই আসে না। সে এখন আমাদের বাড়ির কেউ নয়। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও টাকা পয়সা চুরির অভিযোগ রয়েছে। নগদ ৫ লাখ টাকা, ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩টি মোবাইল ফোন নিয়ে ঘটনার দিন তাহমিনা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।’ এদিকে দুই সন্তানের কাছে ফিরতে চান প্রবাসী বধূ তামান্না আক্তার।
তার স্বজনরা জানিয়েছেন, তামান্না আক্তারের ঘটনা থেকে তার শাশুড়ি ফায়দা লুটছে। মা থেকে দুই সন্তানকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এটি কোনো ভাবেই উচিত হচ্ছে না। এমনকি সামাজিক বিচারকদেরও তারা অবজ্ঞা করেছে। এতে করে দুই সন্তান থেকে তাদের মা আলাদা অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে তামান্নার স্বজনরা প্রশাসন সহ এলাকার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।