মৌলভীবাজারের জিয়ার নির্দেশেই সিলেটে ব্লগার অন্তত হত্যা : ১১ ফেব্রুয়ারি সম্পত্তি ক্রোকি পরোয়ানা তামিল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৩:৫৪,অপরাহ্ন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়া। তিনি থাকনে সব কিছুর আড়ালে। কোনো জঙ্গি হামলা হলেই সবার আগে উঠে আসে তার নাম। সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে তারই নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এমনকি ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করে সরকার। তবে কয়েক বছরে এই জঙ্গি নেতার অবস্থান জানাতে ব্যর্থ পুলিশের জঙ্গি দমন ও তদন্তে নিয়োজিত ইউনিটগুলো। তিনি জঙ্গি স্লিপার সেলের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (বহিষ্কৃত) । তার নির্দেশেই হয়েছে এক ডজন হত্যা। জিয়াকে গ্রেফতার করতে না পারায় আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন। ক্রোকি পরোয়ানা তামিলের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীদের দাবি, একসময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর মতাদর্শী জিয়া পরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি ব্লগার নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক আসামি জিয়াকে গ্রেফতার করতে না পারায় তার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডলের আদালত। ২০১৯ সালের ৫ মে লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায়ও জিয়ার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আলাদা আদালত। দেশে কোনো পলাতক জঙ্গির এমন সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশের ঘটনা আগে ঘটেনি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, জিয়ার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে এখনো।
এদিকে এই দুর্র্ধষ জঙ্গির নির্দেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক লেখক অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিমুদ্দিন সামাদ, নীলাদ্রি নিলয়, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা এবং প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে সিটিটিসির উপকমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়া আমাদের কাছে এখনো পলাতক। একাধিক মামলায় সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ায় তাঁকে আমরা খুঁজছি।’
তদন্তকারী সূত্র জানায়, জিয়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। তখন থেকেই জিয়া পলাতক। পরে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন হত্যার প্রেক্ষাপটে আবারও জিয়ার নাম আলোচনায় আসে। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টার সময় জিয়া হিযবুত তাহরীরের মতাদর্শী ছিলেন। একসময় ঢাকার বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে ছিলেন তিনি। অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর জিয়া সাত দিন মধ্যবাড্ডায় হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য আহমেদ রফিকের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তিন-চারজন ব্যক্তি বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে গোড়ানের বাসায় ঢুকে ব্লগার নীলাদ্রি নিলয়কে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে জিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেফতার ১২ স্লিপার সেল সদস্য তাদের জবানবন্দিতে জিয়ার নাম প্রকাশ করে। গত বছরের ৬ অক্টোবর এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সেই পরোয়ানা তামিল বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন গত ১২ জানুয়ারি তদন্তকারীরা আদালতে জানান, জিয়ার হদিস মিলছে না। আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন।