ব্রিটেনে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
মো: রেজাউল করিম মৃধা:
ব্রিটেনে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতা এবং হস্তক্ষেপ দুটোই জরুরি। তা না হলে ব্রিটেনে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটবে না বলে মনে করেন ব্রিটেনের বাংলাভাষা নিয়ে গবেষকরা।
ব্রিটেনের স্কুল গুলিতে প্রাতিস্ঠানিক ভাবে বাংলা একটি সাবজেক্ট হিসেবে দিতে হবে। ইংরেজী ভাষার সাথে সাথে অন্যান্য কয়েকটি ভাষা অপসনাল হিসেবে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেকেন্ডারি স্কুলে এই ভাষা প্রাতিস্ঠানিক ভাবে শুরু হয়।
ব্রিটেন হচ্ছে বহু ভাষার দেশ এক কথায় মাল্টিকাল্চার লেন্গুয়েজ বলে। এর মধ্যে ১৪ ভাষা বেশী সম্বৃদ্ধ । এছাড়া ভাষা বলার ধরনে বা একসেন্স , ইংলিশ, স্কটিশ, ওয়েল্স এমন কি, ক্যাথোলিক, রোমান, পোলিশ, পর্তুগীজ সহ বিভিন্ন ডং বা বলার ধরন আলাদা আলাদা আছে। ৩০০ টির মত ভাষার লোক সমগ্র ব্রিটেনে আছে। এই সব ভাষার মধ্য ২০১৯ সালের একটি তথ্য গবেষনায় দেখা গেছে ব্রিটিশদের ইংরেজী ভাষার পর প্রথমে রয়েছে পোলিশ ভাষা এরপরই বাংলা ভাষা।
ব্রিটেনের স্কুল গুলিতে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এই ভাষা গুলি পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে।
যেমন :-
স্পেনিস ভাষা,
জার্মানী ভাষা,
ফরাসী ভাষা,
পোর্তুগিজ ভাষা,
জাপানিজ ভাষা,
চাইনিজ ভাষা ,
পোলিশ ভাষা এবং
ইতালীয়ান ভাষা সহ অন্যান্য দেশের ভাষা ও কিছু কিছু স্কুলে আছে।অথবা কাউন্সিলের সহযোগিতায় ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।ইংরেজী ভাষার সাথে আর একটি ভাষা শিক্ষার সুবর্ন সুযোগ রয়েছে ব্রিটেনে। যারা ইংরেজীর সাথে অবসোনাল আর একটি ভাষা শিখবেন পরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে তিনি প্রাধান্য পাবেন।
বাংলা ভাষা ব্রিটেনের ভাষায় কথা বলার জনসংখ্যায় অর্থাৎ বিদেশী ভাষা পোলিশ ভাষার পর দ্বিতীয় অবস্থানে বালা ভাষার অবস্থান থাকলেও প্রাতিস্ঠানিক কোন স্বীকৃতি এখনো পায় নাই। তৃতীয় বাংলাখ্যাতো বিলেতের বাঙ্গালী অধ্যষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বাংলাদেশীরা বাংলা ভাষা শিক্ষার বেশ গুরুত্ব দিলে ও বাংলা ভাষায় পড়ার বিকল্প হিসেবে কাউন্সিলের ফান্ডে শনি ও রবিবার এবং আফটার স্কুল বিশেষ কিছু কমিউনিটি সেন্টারে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যাবস্থা থাকলেও গত ২/৩ বছর ধরে কাউন্সিলের বাজেট কাটের সাথে বাংলা ভাষা ও কমিউনিটি ল্যান্গুয়েজ শিক্ষার ব্যাবস্থা ও বাজেট কাট হওয়াতে এই সকল সেন্টার গুলি বন্ধের হুমকির মুখে আছে।
বাজেট কাটের ফলে বাংলা স্কুল বা কমিউনিটি ল্যান্গুয়েজ বন্ধ ঘোষনা করলে কাউন্সিলের সামনে বিক্ষোভ সহ মিছিল মিটিং । বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ব্যাপক দাবীর মুখে আপাতত স্থগিত করলেও কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে।
অবশ্য মাত্র কয়েক বছর আগেও ব্রিটেনের জিসিএসি এবং এ লেভেল পরীক্ষায় বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিলো কিন্তু বর্তমানে সেই সুযোগ থেকে বন্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা ।
মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে যতটা তৎপর হয় মাস শেষ হতে না হতেই আবার সেই আগের তৎপরতা কমে যায়।এই তৎপরতা শুধু আলোচনা সভা, মিছিল মিটিং কথার ফুলঝুড়ি ফটলেও বাস্তবায়নের সাংগঠনিক ভূমিকা তেমন নেই। আর সাংগঠনিক রুপ নিতে গেলেই নেতৃত্বের ক্রোন্দলে সব কিছু ভেস্তে যায়। শুধু মুখে বললেই হবে না এই তৎপরতার জন্য সরকারি ভাবে প্রাতিস্ঠানিক রুপ দিতে হবে। প্রাতিস্ঠানিক রুপ পেলে বাংলা ভাষা প্রবাসেও আরো সম্বৃদ্ধ হবে।ঠিকে থাকবে সগৌরবে।
এই প্রাতিস্ঠান রুপ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে বলে মন্তব্য দিয়েছেন।
গত ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ ব্রিটেনের সবার প্রিয় এমএএইচ অন লাইন টিভির জনপ্রিয় এবং দর্শক নন্দিত” মৃধা শো”
প্রগ্রামে আমন্ত্রিত অতিথি সামাজিক এক্টিভিস্ট ও কমিউনিটি নেতা -আনসার আহমেদ উল্লাহ ও সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক- রোমান বকত চৌধুরী । উপস্থাপনায় ছিলেন- মো: রেজাউল করিম মৃধা। প্রডিউসার এ্যাভোকেট -মো: আব্দুল হামিদ এবং সাংবাদিক -জাকির হোসেন কয়েস।দুই জন অতিথিই বলেন ব্রিটেনে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশ সরকারকেই দায়িত্ব দিতে হবে।
অতিথিরা বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন।
যেমন:-
১/ ব্রিটেনের কাউন্সিল গুলি বলছে বাজেট কাট। যার জন্য ল্যান্গুয়েজ সার্ভিসে আর সহযোগিতা করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে পরিস্কার একটি ধারনা তৈরি করা। শতকরা কত পারসেন্ট কাট হয়েছে ? কিভাবে সেই বাজেট পূর্ন করা যায় তার বিকল্প তৈরি করতে হবে।
২/ লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।শুধু মাত্র আলোচনা সভার মাধ্যমে শেষ না করে এর বাস্তবায়ন পর্যন্ত কাজ করতে হবে।
৩/ স্থানীয় কাউন্সিল গুলির সাথে বাংলাদেশ হাই কমিশন একটি রোড ম্যাপ তৈরি করবে। কোন কোন খাতে ভর্তুকি এবং শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী দের সাথে সমন্বয় করে মূল কারন জানতে হবে।
৪/ স্থানীয় কাউন্সিল যে বাজেটের কথা বলে এই সার্ভিস তুলে নিতে চাচ্ছে। সেই বাজেট খুবই সামান্য । এই সামান্য বাজেটের দোহায় দিয়ে একটি ভাষা শিক্ষা থেকে পরিবর্তী প্রজন্মকে বন্চিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই ব্যাপারটি বাংলাদেশ সরকার কে এবং লন্ডনের হাই কমিশনকে অনুধাবন করতে হবে।
৫/ ব্রিটিশ পারলামেন্টের এডুকেশন মন্ত্রনালয়ের সাথে হাই কমিশন এই বাংলা ভাষাকে ব্রিটেনের স্কুল গুলিতে অন্যান্য দেশের ভাষার মত বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ব্রিটেনে বিশ্বের বেশ কয়েকটি ভাষা সাবজেক্ট স্কুল গুলিতে আছে। সেই খানে বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তবেই এই বাংলা ভাষা ব্রিটেনে ঠিকে থাকবে। মাথা উঁচু দাঁড়াবে।
৬/ কাউন্সিল অবশ্য দাবীর মুখে বিভিন্ন সময় ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
যেমন:-
প্রথমত:- সোজা এবং কমন উত্তর বাজেট কাট।
দ্বিতায়ত :- বলবে যে সব শিক্ষকরা পড়ান তাঁরাই ভালো বাংলা জানেন না।
তৃতীয়ত:-বলবে ছাত্র/ ছাত্রী নাই বা উপস্থিতি কম।
চতুর্থত:- বলবে পড়ানোর মত জায়গা খালি নেই।
পন্চমত :- বলবে, যে কমিটি দাঁড়া পরিচালিত হচ্ছে বাংলা কোর্স সেই কমিটির লোকরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছেন না।
মূলত :- সত্যিকার অর্থেই কাউন্সিল বাংলা ভাষা ব্রিটেনে সুপ্রতিস্ঠিক হোক সেই টা চায় ক?
সেই চাওয়া কত টুকু সেই বিবেচনা করতে হবে।
লন্ডননস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কয়েক বছর যাবত ব্রিটেনে বাংলাদেশী কৃতি ছাত্র/ছাত্রীদের কৃতিত্বের জন্য এওয়ার্ড অনুস্ঠানের আয়োজন করে সেটা সত্যিই প্রসংসনীয় ।
তবে বাংলা ভাষা ঠিকিয়ে রাখতে হলে ব্রিটেনে বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য পরিবেশ যেমন সৃস্টি করতে হবে।শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরনা দিতে হবে। বাংলা ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে। ভাষা ঠিকে না থাকলে বাংলা সংস্কৃতি ও একদিন হারিয়ে যাবে। তাই বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঠিক এবং সুস্পস্ট পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে কাউন্সিল পর্যন্ত সঠিক রুপ রেখা তৈরি করে কাজ করতে হবে।
ব্রিটেনের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করতে আরো অনুপ্রাণিত হবে।
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় সারা বিশ্ব সুপ্রতিস্ঠিত হবে।এমন টি প্রতাশা আমাদের সবার।
বাংলা ভাষা অমর হোক।