সুনামগঞ্জে ৫ শতাধিক গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র ৩ সপ্তাহে ৭ গ্রামে অন্তত ৫ শতাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান গৃহস্থরা।
প্রতিবছর বন্যার শেষে অল্প পরিমাণে গরুর ক্ষুরা রোগ দেখা দিলেও এবার ভয়াবহ আকারে ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে অসংখ্য গরু। রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়র জানান, কৃষ্ণনগর, বাণীপুর, কোনাগাঁও, নলুয়া, ঢালাগাঁও, বেরীগাঁও, বাঘমারা প্রভৃতি গ্রামের দেশি বিদেশি গরুর মধ্যে ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত গরুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ইতোমধ্যে অন্তত ৫ শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ রোগ প্রতিরোধে যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। একাধিকবার শহরের প্রাণিসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষুরারোগে আক্রান্তের আগে গরুর দেহে উচ্চমাত্রায় জ্বর আসে। এই জ্বর থেকে পায়ের ক্ষুরের মাঝখানে ফোসকা হয়ে ফেটে গিয়ে শ্লেষ্মা বের হয়। এই শ্লেষ্মা থেকে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই কারণে সঠিকভাবে হাঁটতে পারে না গরু। এই ফোসকার শ্লেষ্মা থেকে গরুর অন্যান্য স্থানে রোগের বিস্তার ঘটে। গরুর মুখের ভেতরে, জিহ্বায়, দাঁতের মাড়িতে ফোসকা উঠে লালা পড়ে। খাবার খেতে পারে না। এই কারণে গরুর দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। ওজন কমতে থাকে। গাভীর দুধ কমে আসে।
এছাড়া গাভীর দুধ থেকে বাছুরে এই রোগ ছড়ায়। শ্লেষ্মা থেকেও ছড়িয়ে পড়ে ক্ষুরা রোগ। এজন্য আক্রান্ত গরু আলাদা ও পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখার প্রতিও গুরুত্ব দিচ্ছেন গৃহস্থরা।
কৃষ্ণনগর গ্রামের খামারি আব্দুল বারিকের ৭টি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর পায়ে, মুখে ও জিহ্বায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আক্রান্ত গরুর মধ্যে কয়েকটি আছে বিদেশি। সবগুলো দুধওয়ালা। এখন দুধ কমে গেছে। ওজনও কমে গেছে। রোগ প্রতিরোধে ক্ষত স্থানে পটাশিয়াম লাগিয়ে দিচ্ছেন। রোগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
তিনি জানান, প্রাণিসম্পদের কোনো লোক আসেন না। গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকিতে আছেন।
একই গ্রামের আব্দুল মতিনের ৮টি গরু, আবু হানিফার ৫টি গরু, জামাল মিয়ার ৪টি, আবু আহমদের ৩টি, আব্দুস ছালামের ২টি, ইমান হোসেনের ৪টি, আব্দুল আওয়ালের ৫টি, তুতা মিয়ার ২টি, আব্দুর রশিদের ৬টি, মুজিবুর রহমানের ৪টি, আব্দুল করিমের ৩টি, মিজান মিয়ার ৪টি, মকসুদ আলীর ২টি গরুসহ আরও অনেকের আক্রান্ত গরু রয়েছে। একইভাবে অন্যান্য গ্রামেও রয়েছে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত অসংখ্য গরু।
বাঘমারা গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, প্রায় ২০ দিন আগে থেকে ভয়াবহ আকারে এই ক্ষুরারোগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. রৌশন ইসলাম বলেন, এলাকায় অনেক গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমি ক্ষুরারোগ প্রতিরোধে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
সাবেক ইউপি সদস্য আওয়াল বলেন, আমাদের এই এলাকায় প্রতি বছর অল্প পরিমাণে গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়। এবার মাত্র ৩ সপ্তাহে প্রায় ১৫০ জন গৃহস্থের ৫ শতাধিক গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় সকল গৃহস্থের গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। যথাযথ চিকিৎসা না হলে গৃহস্থরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ক্ষুরারোগ প্রতিরোধে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশাদুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই বিষয়ে জেনেছি। আমি দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরেজমিনে লোক পাঠিয়ে দেব।