কানাইঘাটে ভোটে নানা সমীকরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
কানাইঘাটের ভোটে অনেক সমীকরণ। আওয়ামী লীগে ঐক্যবদ্ধতার অভাব। বিএনপিতে নেতৃত্ব শূন্যতা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে পরগনার সাপোর্ট। জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নীরব ভূমিকা। এসবের কারণে কানাইঘাট পৌর নির্বাচনে এবার আগে থেকেই হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন চার প্রার্থী। এর মধ্যে দু’জনই স্বতন্ত্র।
ভোটের সমীকরণে তারা তুমুল লড়াইয়ে রয়েছেন। এবারের কানাইঘাট পৌর নির্বাচন প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র কাছে অগ্নিপরীক্ষা। সিলেটে এবার তিনটি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীদের জামানত পর্যন্ত হারিয়েছেন। দুটি পৌর নির্বাচনে ছিল বিদ্রোহীদের জয়জয়কার। এ কারণে কানাইঘাটে জয় চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দু’টি দলেরই ভোট ব্যাংক রয়েছে কানাইঘাটে। কানাইঘাট পৌর নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবীণ নেতা ও সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান, বিএনপি’র প্রার্থী নতুন মুখ শরিফুল হক। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করছেন বর্তমান মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আল মিজান ও সমাজসেবক সোহেল আমীন। এর বাইরেও আরো দুই প্রার্থী রয়েছেন। তবে- এখন পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী। বর্তমান মেয়র ও এবারো নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন আল মিজান নানা কারণে এগিয়ে রয়েছেন। নিজে আওয়ামী লীগের সাবেক শীর্ষ নেতা হওয়ার কারণে দলের তৃণমূলে তার ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া বিগত ৫ বছরে তিনি পৌরসভায় শতাধিক কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করিয়েছেন। নিজাম উদ্দিন আল মিজানের পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূল ছাড়াও জামায়াত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাংশ কাজ করছে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। এ ছাড়া পরগনাভিত্তিক ভোটেও তার প্রভাব রয়েছে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেল আমীনের ভোট ব্যাংক কেবলমাত্র পরগনা ভিত্তিক। এবারো তাদের সমর্থন নিয়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। গতবার সোহেল আমীন পরগনার ভোটের ওপর ভিত্তি করে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। ফলে এবার তাকে নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন ভোটাররা।
বলা হচ্ছে- কানাইঘাট পৌর নির্বাচন এবার আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের জেলার নেতারা কানাইঘাটে গিয়ে দলীয় কোন্দল মিটমাট করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তারা দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ইতিমধ্যে জেলা নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কানাইঘাটে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কানাইঘাট আওয়ামী লীগে তিন নেতার শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জমির উদ্দিন প্রধান, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও জেলার নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ।
দলের তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন- কানাইঘাটে নৌকার পক্ষে পলাশের পক্ষের কর্মী বাহিনী একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে। অন্য নেতাদের কর্মী বাহিনী নিয়ে বিতর্ক আছে। তারা কখনো নৌকা, আবার কখনো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
কারণ হচ্ছে- কানাইঘাটের সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান নিজে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা হওয়া সত্ত্বেও কানাইঘাট আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধতাকে ধরে রাখতে পারেননি। এ কারণে কানাইঘাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভোটব্যাংক থাকলেও নৌকা জয়ী হতে পারেনি বিগত নির্বাচনে। এবারো নৌকার প্রার্থীর অবস্থান পরিষ্কার হচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপি’র প্রার্থী শরিফুল হকের পক্ষে দলের বেশির ভাগ নেতা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কিন্তু অভিভাবকহীন অবস্থায় আছেন শরিফুল। কানাইঘাটে বিএনপি’র দুই অভিভাবক মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) ও বিএনপিদলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। ভোটকে কেন্দ্র করে তারা কানাইঘাটে আসেননি। ফলে বিএনপি’র প্রার্থী নিজে থেকেই ভোটের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত রয়েছেন। বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সিলেট জেলা বিএনপি’র নেতারা কানাইঘাটে গিয়ে বর্ধিত সভা করে এসেছেন। এরই মধ্যে আমেরিকা থেকে ভিডিও বার্তায় ভোট চাচ্ছেন ওই দুই বিএনপি নেতা। বিএনপি’র প্রার্থী শরিফুল হকের বাড়ি নদীর পূর্ব পাড়ে। ওই পাড়ে রয়েছে দুটি ওয়ার্ড। দুই ওয়ার্ডেও আবার কাউন্সিলর বিএনপি’র দুই প্রার্থী। এ কারণে ওই দুই ওয়ার্ডে আনুপাতিক হারে বিগত ৫ বছর উন্নয়ন হয়েছে কম। প্রায় ৪ হাজার ভোট রয়েছে ওই দুই ওয়ার্ডে। বিএনপি’র প্রার্থী শরিফুল হকের পক্ষে উন্নয়ন প্রশ্নে ওই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কানাইঘাটে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৪২৭ জন। গতবার বিজয়ী মেয়র পেয়েছিলেন ৩১শ’ ভোট।