সিলেটে প্রথম টিকা নিলেন ফ্রন্টলাইনাররা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে প্রথমে করোনা টিকা নিলেন ফ্রন্টলাইনাররা। করোনার সম্মুখসারিতে করছেন যুদ্ধ। ভয়কে, জয় করতে তারাই প্রথম নিলেন টিকা। এর মধ্যে ছিলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকরাও। তাদের টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সিলেটে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে- করোনা টিকা নিলেও প্রথমদিনেও কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর মিলেনি। টিকা গ্রহণ করে বুথের বিশ্রামাগারে কিছু সময় অবস্থানের পর তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। সকাল ১০ টা থেকে সিলেটে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়।
এরজন্য আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা হয়েছিল ওসমানী হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্র। টিকা প্রদানের আগে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে শরিক হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি টিকা প্রদানে সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন- করোনা টিকা প্রদানে অনেক দেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানের পর বেলা ১১ টার দিকে প্রথমে টিকা নেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান। তার সঙ্গে একই সময়ে টিকা নেন সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম ও জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল-আজাদ। এ সময় সেখানে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। টিকা প্রদানের সময় তিনি পাশে থেকে সবাইকে উৎসাহ প্রদান করেন।
সিলেটে প্রথম টিকাগ্রহণকারী সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান- ‘মানসিক ও শারীরিকভাবে আমি পুরো সুস্থ আছি। আগের চেয়ে বরং ভালো আছি। কারণ টিকা দিয়ে করোনার ভয় অনেকটা কেটে গেছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে প্রথম টিকা নিতে পেরেও আমার ভালো লাগছে।’ জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম টিকা গ্রহণের পর বলেন- ‘টিকা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেও টিকা নিয়েছি। নানা বয়সের মানুষজন নিয়েছেন। কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ফলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অপপ্রচারে কেউ কান দেবেন না। সিলেটে টিকার কোনো সংকট হবে না বলেও জানান জেলা প্রশাসক।’
এদিকে- দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়, মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. শিশির চক্রবর্তী, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. শাহাবুদ্দিন ও কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বিএমএ নেতা আজিজুর রহমান রোমান টিকা গ্রহণ করেন। টিকা গ্রহণের পর তারা পুরোপুরি সুস্থ আছেন এবং তাদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সিলেটে প্রথমদিনে টিকা গ্রহণ করেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক কৃতী ফুটবলার রণজিৎ দাশ। সিলেটের একাধিক জনপ্রতিনিধিও এই কার্যক্রমে শরিক হয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, তৌফিক বক্স লিপনসহ কয়েকজন কাউন্সিলর টিকা গ্রহণ করেন। ওসমানী হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেট বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও সকাল থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে প্রথমে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন টিকা গ্রহণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে পুলিশ সদস্যরা টিকা গ্রহণ করেন।
সবাইকে টিকা গ্রহণের আহ্বান মেয়র আরিফের: ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রের ১২ বুথের ?টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য গঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন কমিটি’র সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘আমরা সফলভাবে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছি। ভ্যাকসিন নিয়ে কারো মনে ভয় সংশয় থাকার কোনো কারণ নেই। করোনাযুদ্ধে প্রথম সারিরযোদ্ধারা এরই মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে উৎসাহমূলক বক্তব্য শুনেছি। ফলে সবাইকে নির্ভয়ে টিকা নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।’ মেয়র বলেন, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিসিক’র কাউন্সিলরবৃন্দ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃতী ফুটবলার রণজিৎ দাস স্বপরিবারে টিকা নিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে টিকা নেয়ার পর কথা বলেছি। তারা সবাই ভালো আছেন। এবং সকলেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো রয়েছেন।’
সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জাতীয় এই কার্যক্রমকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন প্রস্তুত নিয়েছে। সহযোগিতা করছেন সিলেটের সরকারি সকল সংস্থা ও বিভাগ। টিকাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন।’