স্বপ্নের ইউরোপ: বৈধ পথ আর অভিবাসন, যে তথ্যগুলো জানা দরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১১:৩৯,অপরাহ্ন ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সুরমা নিউজ :
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ। প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান। অন্যদিকে অবৈধভাবে যাওয়া বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়।
বাংলাদেশি তরুণদের একাংশের মধ্যে ইউরোপে যাওয়ার বাসনা তীব্র। সেই বাসনায় তারা দুর্গম, অবৈধ পথে যাত্রা করছে। অথচ চাইলে বৈধ পথেও ইউরোপ যাওয়া সম্ভব।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র প্রতিবেদক আরাফাতুল ইসলাম জানিয়েছেন, বসনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন, একেকজন বাংলাদেশি তরুণ আঠারো থেকে বিশ লাখ টাকা খরচ করেন কয়েক মাস বা বছর ধরে যাত্রা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো একটি দেশে পৌঁছাতে। এই যাত্রায় কখনো কখনো তাদের বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়, কখনো উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হয়, কখনো পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কখনো বা মাসের পর মাস লুকিয়ে থাকতে হয় জঙ্গলে বা কোনো গোপন আস্তানায়।
প্রতিকুল এই যাত্রায় জীবনের ঝুঁকিও অনেক। লিবিয়াতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে কিংবা সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মাঝেমাঝেই মারা যান ইউরোপে অভিবাসনে আগ্রহী বাংলাদেশিরা। কখনো তাদের মরদেহটা মেলে, কখনো তা-ও মেলে না।
আরাফাতুল ইসলাম মনে করেন, তাদের এই মরণপণ চেষ্টার পেছনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন নীতিও কিছুটা দায়ী। ইটালি বা পর্তুগালের মতো দেশগুলোতে কোনোক্রমে যদি কোনো একজন ব্যক্তি পৌঁছাতে পারেন, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই বৈধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। যাদের ভাগ্য একান্তই সহায়ক নয়, তারা চলে যান ফ্রান্সে, কারণ সে দেশে অবৈধভাবে থাকা যায় যুগের পর যুগ। এরকম সুযোগ রয়েছে বলে অনেকেই চান কষ্ট করে হলেও সেসব দেশে পৌঁছাতে।
তবে ইউরোপের দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসনের ভালো সুযোগ আছে। ব্রেক্সিটের পর ইংল্যান্ডে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইটালিতেও সুযোগ বাড়ছে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইটালিতেই বৈধভাবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি গিয়েছেন। এই সংখ্যা সরকারি হিসবে ৫০ হাজারের মতো। যুক্তরাজ্যে গেছে ১৫ হাজারের মতো। তার বাইরে অনেক দিন ধরেই সিলেট অঞ্চলের অনেক মানুষ সেখানে অভিবাসী হয়েছেন। গত দুই-তিন বছরে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢুকে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান ডয়েচে ভেলেকে জানান, এরকম অ্যাসাইলাম সিকার আছেন ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সাইপ্রাসহ আরো কিছু দেশে। সবচেয়ে বেশি আছে ইটালিতে, ৩০ হাজার। অন্যান্য দেশে আছে ১০-১৫ হাজার করে।
২০১৭ সালে ইইউ তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের সাথে স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি সই করে। শরিফুল হাসান জানান, শুধু গত বছরই সমুদ্র পথে অবৈধ চার হাজার ৪২১ জন বাংলাদেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন।
ডয়েচে ভেলে’র প্রতিবেদক আরাফাতুল ইসলাম জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোরও নানা খাতে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। ইউরোপ তাই প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষকে বৈধভাবেই ইউরোপে প্রবেশ করার সুযোগ দিচ্ছে। সেই সুযোগ নিতে হলে প্রয়োজন একটু পরিকল্পনা এবং খানিকটা পরিশ্রম।
তার মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের একটি সহজ উপায় হচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা। যে আঠারো বা বিশ লাখ টাকা এবং সময় একজন মানুষ অবৈধ পথে ইউরোপে আসতে ব্যয় করেছেন, সেই সময় ও অর্থ তিনি ইউরোপে শিক্ষার্থী হিসেবে প্রবেশ করতে ব্যয় করলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কেননা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা চাকুরির সুযোগ পায়। জার্মানি লেখাপড়া শেষে চাকুরি খোঁজার জন্যও এক বছরের বেশি সময় দেয়। মোটের উপর ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ তো রয়েছেই। আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে ইউরোপের এই দেশটিতে এসেছেন।
আরাফাতুল ইসলাম আরো জানান, চাকুরি সূত্রে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগও এখন ক্রমশ বাড়ছে। জার্মানি কয়েক বছর আগে এ সংক্রান্ত আইন শিথিল করেছে। ফলে এখন বাংলাদেশে বসেও জার্মানির চাকরির বাজারে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চাকরি খোঁজা যায়। এই কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
তার মতে, ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশের আরেকটি বড় উপায় হতে পারে বিভিন্ন সেবা খাত। বিশেষ করে কৃষি এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব ইউরোপের দেশগুলোতে প্রকট। জার্মানিতে নার্সের অভাব রয়েছে৷ ইউরোপের মানে প্রশিক্ষিতরা সহজেই এই খাতে চাকরি নিয়ে আসতে পারেন।
তবে, আরাফাতুল ইসলাম মনে করেন, এজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। ইউরোপের শ্রম বাজার যে ধরনের প্রশিক্ষিত জনশক্তি চায়, সেরকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাংলাদেশে করা হলে বৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের হার বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশ সরকার এজন্য চাইলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি করতে পারে।
বৈধ সুযোগ
অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন। তিনি জানান, ইউরোপের মধ্যে বেস্ট হচ্ছে ইংল্যান্ড। সেখানে এখন পাঁচ বছরে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও সেখানে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানরা এখন সহজেই ব্রিটিশ পাসপোর্ট পেয়ে যেতে পারে। পড়াশুনা করতে গিয়ে চার বছর থাকার পর কোনো চাকরিতে ঢুকলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশি টাকায় দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব অল্প সময়েই পাওয়া যায়।
তিনি জানান, পর্তুগাল ও গ্রিসও বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে নাগরিকত্বের সুযোগ দিচ্ছে। সেখানে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখাতে হয়। এই বিনিয়োগ বাড়ি কেনা বা অন্য কোনো খাতে হতে পারে। তবে এত টাকা ব্যবসায়ী বা ধনী ছাড়া সম্ভব নয়। যাদের দ্বিতীয় একটা পাসপোর্ট দরকার হয় তারা এই সুযোগ নেন। ফলে পড়াশুনা করতে গিয়ে নাগরিত্ব নেয়াই সহজ। অনেক কম খরচ। আর ইটালিতে অনেক বছর কাজ করতে করতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে।
জার্মানিতে পড়াশুনার জন্য যাওযার সুযোগ আছে। তবে জার্মান ভাষা জানতে হয়।
ইউরোপের দেশগুলোতে শিক্ষিত এবং দক্ষ লোকের জন্য কাজ আছে। তারা সহজেই রেসিডেন্ট পারমিট পায়, নাগরিকত্বও পায়। যারা নানা কাজ আর উচ্চ বেতনের কথা বলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে লোক পাঠায়, তারা আসলে নিজেরাই জানে না ওইসব দেশে কোন ধরনের লোকের কাজের বা থাকার সুবিধা আছে। তারা আসলে পুরো কাজটাই করে প্রতারণার জন্য।
যারা জানেন, তারা নিজেরাই সব কাগজপত্র ঠিকমতো দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে পারেন। কাজ পেতে পারেন। কোনো দালাল ধরার দরকার নেই। বিষয়গুলো বোঝার জন্য বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েব সাইট থেকে তথ্য নিতে পারেন। দূতাবাস থেকে নিতে পারেন। অথবা অভিজ্ঞ কারুর সহায়তা নিতে পারেন।
ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন জানান, ব্রেক্সিটের কারণে এখন ইংল্যান্ডে বাংলাদেশিদের জন্য অভিবাসন আরো সুবিধাজনক হয়েছে। ব্রেক্সিটের আগে ইউরোপীয়, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপীয় অনেক দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে নানা ধরনের কাজে যুক্ত ছিল। বাংলাদেশিদের অনেকেই সেখানে গিয়ে কাজ পেতেন না। রাস্তায়ও ঘুমাতে হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট হওয়ায় পর ইউরোপীয়রা সব চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশিদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা কাজ পাচ্ছেন।
বাংলাদেশি যারা ইংল্যান্ডে যায়, তারা মোটামুটি শিক্ষিত। প্রচুর খাটতে পারে। ফলে তাদের সুনাম আছে। ইটালিতেও বাংলাদেশিদের কাজের সুনাম আছে।
ইটালিতে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিখাতে এখন তাদের লোক প্রয়োজন। এটাও বাংলাদেশিদের জন্য একটা সুযোগ।
ইউরোপের বাইরে কানাডা এবং অষ্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ থেকেই আবেদন করে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। পয়েন্ট সিস্টেম আছে। নানা দক্ষতা এবং অবস্থার জন্য পয়েন্ট নির্ধারণ করা আছে। ছয় মাসের মধ্যেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ওই দেশে গিয়ে থাকতে হয় নাগরিকত্ব বহাল রাখার জন্য। কানাডায় তিন বছরের মধ্যে আর ইউরোপের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
এশিয়ায় আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়ও বিনিয়োগকারী হিসেবে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ আছে। আরব আমিরাতে মাত্র পাঁচ হাজার ডলারে রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়া যায়।
সাবরিনা জেরিন বলেন, না জেনে, না বুঝে ঝাঁপ দেয়া ঠিক না। নিজের দক্ষতা আর যোগ্যতা বিবেচনা করেই ইউরোপে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অবৈধভাবে প্রবেশ করলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।
পৃথিবীর কোনো দেশেই অভিবাসন প্রক্রিয়া কোনো গোপন বিষয় নয়। দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে তা দেয়া থাকে।ন অভিবাসন বিভাগ থেকেও তা জানা যায়।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ডয়েচে ভেলেকে বলেন, সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ, যারা ইউরোপে যেতে চান, তার ইংরেজি পড়তে পারেন না বা বুঝতে পারেন না। আবার অন্যান্য বিদেশি ভাষাও তারা জানেন না। ফলে এখানকার এজেন্সিগুলো নানা ভুয়া তথ্য দিয়ে তাদের ফুসলিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে। কোন যোগ্যতায় যাওয়া যাবে তা তারা জানেও না, বলেও না।
এ কারণেই এখন অনেক দেশ জানাচ্ছে, নিয়ম মেনে আবেদন করলে তাদের দেশে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ আছে।
এখানে বাংলাদেশের অভিবাসন মন্ত্রণালয়েরও অনেক দায় আছে বলে মনে করেন আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, কোন দেশে কোন ধরনের লোকের অভিবাসনের সুযোগ আছে, কী যোগ্যতা প্রয়োজন তা প্রচার করা দরকার। মানুষ যেন জানতে চাইলে সহজেই তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন তার ব্যবস্থা করা দরকার।
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে। এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ। ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ।
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে। কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ। আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ। শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ। বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক। প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক।
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড। এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে। ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে। এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে।
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন। স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়। শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা।
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন। কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও। এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়।
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন। এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক।
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন। প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক। আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ। ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের। ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম। যারা এভাবে যান, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে