মৃত্যুর আগে যে আকুতি জানান ‘পল্লী ডাক্তার’ হায়াত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
মৃত্যুর একদিন আগে চাচাতো ভাই রহিমকে ফোন করেছিলেন ‘পল্লী ডাক্তার’ রেজাউল করিম হায়াত। ওই সময় তিনি ফোনে প্রাণ বাঁচানোর আকুতির কথা জানিয়েছিলেন ভাইয়ের কাছে। কোম্পানীগঞ্জের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার আবদারও জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন- সিলেটের লালবাজারের হোটেল মোহাম্মদীয়ার ২০১ নম্বর কক্ষে রয়েছেন তিনি। তার এই ফোন পেয়ে স্বজনদের পাঠানো হয়েছিল হোটেলে। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। হোটেল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। ওই দিন দুপুরে হায়াত আবারো ফোন করেছিলেন বাড়িতে তার এক স্বজনের কাছে।
জানিয়েছিলেন- সন্তানদের যেন দেখে রাখেন। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ ছিল হায়াতের। গতকাল মানবজমিনের কাছে এসব তথ্য জানান রেজাউল করিম হায়াতের চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম। তিনি জানান- ‘ভাইকে বাঁচাতে আমরা লালবাজারের সব হোটেলে খোঁজ করেছি। এমনকি ছুটে গিয়েছিলাম হোটেল বিলাসেও। সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি। গত সোমবার পুলিশ মারফতে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।’
আব্দুর রহিম জানান- ‘শনিবার ভোরে মোবাইল ফোনে হায়াত রহিমকে বলেন পুলিশ আমাকে মেরে ফেলবে বলে কল কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর আবার কল দিয়ে বলেন পুলিশ নয় আমাকে পাবলিক মেরে ফেলবে।’ তুই কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ নিয়ে এসে আমাকে বাঁচা। প্রয়োজন হলে টাকা ২০ হাজার দিয়ে দিবো। রহিম কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি কলটি কেটে দেন।’ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রাজনগর কালাসাদেক এলাকার চেরাগ আলীর ছেলে হায়াত। তিনি গ্রামের পল্লী ডাক্তার। হায়াত আলী বিয়ে করেছিলেন তিনটি। প্রথম ও তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে চলছিল সংসার। সবমিলিয়ে সংসার জীবনে ৯ সন্তানের জনক তিনি।
গত ১৮ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে সিলেট আসার কথা বলে বের হন। সেদিন থেকে নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছিলেন। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লালবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হোটেল মোহাম্মীয়া আবাসিকের পেছনে রেজাউল করিম হায়াতের লাশ দেখতে পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তার শরীরে বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী মরদেহের চোখে, কানের নিচে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার নাক-মুখসহ শরীর রক্তাক্ত ছিল। এরপর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- এই ঘটনায় নিহতের ছোট বোন মিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। লালবাজারের হোটেল মোহাম্মদীয়ার ম্যানেজার আব্দুর রউফ, সহকারী ম্যানেজার শামীম, হোটেল কর্মচারী দেলোয়ার ও ফরিদকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে শেষে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় গত মঙ্গলবার তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে হোটেল এমদাদীয়ার ২ জন স্টাফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা হলেন- প্রাণেশ ও ফয়ছল আহমদ। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ জানায়- এলাকায় একটি মারামারির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ার কারণে হায়াতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেটে চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি সিলেটে অবস্থান করছিলেন। স্বজনরা জানিয়েছিলেন- সিলেট নগরীর হোটেল বিলাসের ৩০৩ নম্বর কক্ষেও কিছুদিন বসবাস করেছেন হায়াত। ওই হোটেলে কাপড় রেখেই তিনি চাবি নিয়ে চলে এসেছিলেন। এরপর আর হোটেলে যাননি বলে জানান তিনি।