যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে লে. কমান্ডার হলেন সিলেটের শামসুল হক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩১:৪১,অপরাহ্ন ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সুরমা নিউজ :
বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সিলেটের শামসুল হককে প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) গোয়েন্দা স্কোয়াডে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদে উন্নীত করা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি শুক্রবার নিউইয়র্কের কুইন্সে এনওয়াইপিডির পুলিশ একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই পদোন্নতি লাভ করেন। এনওয়াইপিডিতে গোয়েন্দা স্কোয়াডে যুক্ত হয়ে শামসুল হক শুধু ইতিহাসই গড়লেন না, তার সাথে বাংলাদেশের নাম ও উজ্জ্বল করলেন।
সিলেটে জন্ম গ্রহণকারী শামসুল হক ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে এনওয়াইপিডিতে যোগদান করেন। ২০১০ সালে তাকে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৪ সালে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পাবার পর তিনি এনওয়াইপিডির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক তদন্ত গ্রুপের দায়িত্ব নেন। তিনি প্রথম সাউথ এশিয়ান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসেবে কুইন্সে এনওয়াইপিডির পুলিশ একাডেমিতে অভিষিক্ত হয়েছেন।
সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে সিদ্ধহস্ত লেফটেন্যান্ট শামসুল হক সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জের বাঘার গ্রামে মরহুম আবদুল মুসাব্বির এবং মরহুম নুরুন নেছা দম্পতির সন্তান। শামসুল হক যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ১৯৯১ সালে। বর্তমানে স্ত্রী রুবিনা হক ও দুই ছেলে নিয়ে তিনি নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাস করছেন। তার সব ভাই-বোনও নিউইয়র্কে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রথমে তিনি বাসবয় হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ডেলিভারিম্যান, ম্যানেজারসহ নানা চাকরি করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান। শামসুল হক ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন ডিপ্লোমা ডিগ্রি। পরে লাগোয়ার্ডিয়া কমিউনিটি কলেজ থেকে এএস এবং বারুখ কলেজ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন।
বারুচ কলেজে পড়ার সময় তিনি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যান্ড সিইউএনওয়াই ট্রাস্টির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৩০০,০০০ এর ও বেশী শিক্ষার্থীর পক্ষে সিওয়াইওয়াই টিউশন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে মাস্টার্স পাশ করেন।
লেফটেন্যান্ট শামসুল হক জানান, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মুসলমানদের দোষারোপ করার পর তিনি পুলিশ বিভাগে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এনওয়াইপিডিতে যোগদানের পর বুঝতে পারেন যে, এ বিভাগে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রয়োজন। এ অভিপ্রায়েই এনওয়াইপিডিতে কর্মরতদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’ (বাপা)।
তিনি সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সংগঠনের পথ-নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে এখন চার শতাধিক বাংলাদেশি এনওয়াইপিডিতে বিভিন্ন র্যাঙ্কে কাজ করছেন। এর বাইরে এনওয়াইপিডির অধীনে দেড় হাজারের মত ট্রাফিক এ্যানফোর্সমেন্ট এজেন্ট রয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এবং জাতিসংঘের এই শহরের কোনায় কোনায় কর্ত্যবরত পুলিশ এবং ট্রাফিক এজেন্টের মধ্যে বাংলাদেশিরা জাগ্রত।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় লেফটেন্যান্ট শামসুল হক বলেন, আমি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পদোন্নতি পেয়েছি। তবে এই পদে ভবিষ্যতে আরও অনেক বাংলাদেশি থাকবে বলে আমি আশাবাদী। একটি টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এসোসিয়েশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি শামসুলকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এবং জাতিসংঘের শহর যুক্তরাষ্ট্রের কোনায় কোনায় কর্ত্যবরত পুলিশ এবং ট্রাফিক এজেন্টের মধ্যে বাংলাদেশীরা জাগ্রত। এভাবেই স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় বহুজাতিক সমাজে নিজ নিজ মেধার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশীরাও বিশেষ একটি অবস্থানে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন।
শামসুল হক বলেন, “আমি একজন গর্বিত মুসলিম এবং বাংলাদেশী আমেরিকান। বিশ্বে এক বিলিয়নেরও বেশি শান্তিপ্রিয় মুসলমান আছে। কয়েকজন সন্ত্রাসী, যারা নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে, তারা বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। “তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের ধারণা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন এবং আর এজন্যই পুলিশ বিভাগে তার পথ চলা।