নিজাম উদ্দিন সালেহ’র ‘অতীত দিনের সিলেট’ এক ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টিকর্ম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৮:০৭,অপরাহ্ন ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নিজাম উদ্দীন সালেহ। সত্যের অনুসন্ধানে একজন নিরলস মানুষ। নানা পরিচয়ে পরিচিত এই মানুষজন একাধারে একজন সাংবাদিক, কবি, গবেষক, অনুবাদক ও শিক্ষক। এই গুণী মানুষকে নিয়ে বিশদ আলোচনা করার যোগ্যতা আমি অত্যন্ত রাখি না। কবিতা ও সাহিত্যে তাঁর অবস্থান যেমন আছে, তেমনি সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তার কবি পরিচয়।
ছোটবেলা থেকেই নিজাম সালেহ সাধ ছিলো একজন কবি ও সাহিত্যিক হওয়ার। শিক্ষাজীবনেই তিনি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাকিস্তান আমলের একটি অংশ। এ সময়টুকু অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি। ইতিহাসের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সত্তরের দশকে আবির্ভূত হয়ে নান্দনিক কাব্যশক্তিকে ভিন্নমাত্রায় অভিষিক্ত করেছেন। সত্তর ও আশির দশকে আরো যেসব কবির মধ্যে শব্দস্বরে লোক সম্পৃক্ততা ও আধাত্মিক চেতনা দেখা যায়, তাদের শীর্ষে রয়েছেন নিজাম উদ্দিন সালেহ।
নিজাম সালেহকে সাংবাদিক, কবি বা লেখক বলি সেই মানুষের চিন্তা-চেতনায় সবসময়ই রয়েছে নতুনত্ব। ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস লেখায় তাঁর রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ বেরিয়েছে। এবার তাঁর কলম ঘুরে বেড়িয়েছে অতীতের দিনগুলো নিয়ে। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে স্মৃতিচারণমূলক একটি গ্রন্থ। তুখোড় সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন সালেহ বইটিতে সরস ও সহজ ভাষাভঙ্গিতে প্রাঞ্জল ভাষায় তাঁর স্মৃতি থেকে সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্যের নানা কথা তুলে ধরেছেন। আমি আশা করি নতুন বছরকে মিষ্টি মধুর এবং সম্পর্কগুলোকে আরো একটু প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে ২৩১ পৃষ্ঠার ইতিহাস-আশ্রয়ী এই বইটি। বাচনভঙ্গি আর রচনাশৈলীর মাধ্যমে বইটিতে মোদ্দা বিষয় তুলে এনেছেন। এতে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোয় অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়োগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন সত্তর দশকের শক্তিমান কবি নিজাম সালেহ। বইটি একদিন মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস করি।
২৩১ পৃষ্ঠার ‘অতীত দিনের সিলেট’ বইটিতে ২২৭ অনুশীর্ষ রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের। বইটিতে ‘যুদ্ধের স্মৃতি’ শীর্ষক অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন এক টুকরো স্মৃতিকথা রয়েছে। সিলেট শহরের আয়তন গত শতকের ষাটের দশকে কতটুকু ছিলো? এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বইটির একটি অধ্যায়ে এভাবে। এছাড়া ‘টিলাগড়ের সাবাল পীর’ ‘ঘাতক ট্রাক ও বুধাই’ অধ্যায়টি আমাকে খুব স্পর্শ করেছে। লেখক অধ্যায়ের মাঝামাঝি লেখক চমৎকারভাবে একটি কার্য-কারণ তত্তে¡র সামনে হাজির করেন পাঠককে।
‘অতীত দিনের সিলেট’ বইয়ে পাঠকের সাথে সরল সম্পর্কইচ্ছু সকল লেখকেরই আরোধ্য বিষয় সরস ও সহজ ভাষাভঙ্গি নিয়ে এসেছে। নিজাম উদ্দীন সালেহ’র গদ্যের প্রধান শক্তিশালী দিক এটি। সকৌতুকে পাঠককে কাছে টেনে নেন তিনি বইটির শুরু থেকে, বইটির শেষপর্যন্ত। বইটিতে নিজেকে এমন অকপট সরলতায় মেলে দেয়ায় অর্জন করেন পাঠকের সহানুভ‚তি এবং নৈকট্য।
শহর সৃষ্টি করে মানুষ। শুধু ইট, বালি, রড, সিমেন্ট দিয়ে শহর তৈরি হয় না, শহর তৈরিতে লাগে অধিবাসিদের মন, মনন, রুচি, ঐতিহ্য। সেসব থেকে ওই শহরের বাসিন্দাদের মানবিকতা, মানসিকতা, প্রবণতা বোঝা যায়।
২৩১ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে গিয়ে যেন পাঠক কোনক্রমেই একঘেয়েমিতে না ভোগেন তার জন্য লেখকের সচেষ্ট প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় সর্বত্র। এর জন্য কখনও কখনও বর্ণনামূলক অংশ নির্মম ভাবে সংক্ষিপ্ত করেছেন।
নিজাম উদ্দীন সালেহ মানুষের আচরণ সরস গদ্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করে সিলেট সম্পর্কে আমাদের ভালোলাগার ভাব তৈরি করেছেন। মানুষ সম্পর্কে মানুষের ভালো ধ্যান-ধারনা তৈরি পূণ্যের কাজ, নিজাম সালেহ পূণ্যবান।
তিনি বইটিতে বিশদ বিবরন, তার ইতিহাস বা ভ‚-রাজনৈতিক গভীর বিশ্লেষণ বর্ণনা করেছেন। তিক্ত বা সুখকর অভিজ্ঞতা, তা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, সাহায্যপ্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্বীকার-এর সবই আছে বইটিতে।
শুরু হয়ে গেছে অটোগ্রাফ দেয়া। প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক-অনুবাদক ও সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন সালেহ তাঁর সমাজ বিশ্লেষণ বিষয়ক বই ‘অতীত দিনের সিলেট’ বইয়ের অর্ডার হওয়া বইগুলোতে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। সর্বশেষে, যাদের প্রচেষ্টায় এই লেখকের বইয়ের সাথে আমার পরিচয় হলো তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
লেখক : এ টি এম তুরাব, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক জালালাবাদ