যেখানে আওয়ামী লীগ হারে, নেতা জেতেন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ৬:০৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে এখানকার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। তবে প্রতিবারই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় ২০০১ সালে। এরপর এখন পর্যন্ত এখানে পাঁচবার নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবারই এখানে আওয়ামী লীগের নেতারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু কোনোবারই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিততে পারেননি। সর্বশেষ শনিবারের (৩০ জানুয়ারি) নির্বাচনে এখানে মেয়র হয়েছেন জগ প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম রাবেল। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন রাবেল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাকারিয়া আহমদ পাপলু। ওই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন রাবেল। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয় পান।
এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ। নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি রুহেল। নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন এক হাজার ১৭৫ ভোট। আর পাঁচ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে রাবেল পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন গত দুই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জাকারিয়া আহমদ পাপলুও। গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন পাপলু।
এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে রাবেলের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন তিনি। মোবাইল ফোন প্রতীকে পাপুল পেয়েছেন চার হাজার ৫৫৮ ভোট।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার প্রথম দুই নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক পাপলু। দেশের কনিষ্টতম মেয়র হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে তখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান ছিল না।
নির্বাচন কমিশন দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান চালুর পর ২০১৫ সালে গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন পাপলু। তবে ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী।
সিরাজুল জব্বারের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে এখানে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক পান পাপলু। তবে নির্বাচনে হারতে হয় তাকে। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমিনুল ইসলাম রাবেল।
কেনো বারবার এখানে নৌকার প্রার্থীকে হারতে হচ্ছে- এ নিয়ে আলাপ হয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে। কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনুসারীদের সঙ্গে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর বিরোধ রয়েছে।
ফলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা পাপলুর বিরুদ্ধে ছিলেন নাহিদ অনুসারীরা। ২০১৫ সালে তারা সিরাজুল ও ২০১৮ সালে রাবেলের পক্ষ নেয় তারা। এতে ভরাডুবি হয় নৌকার প্রার্থী পাপলুর।
ওই নেতারা জানান, গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি বর্তমান মেয়র রাবেল। আর গত দুই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও জিততে না পারায় এবার নৌকা প্রতীক পাননি সাবেক মেয়র পাপলু।
এবার মনোনয়ন দেয়া হয় ভোটারদের কাছে অনেকটা অপরিচিত রুহেলকে। নির্বাচনে তিনি তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি। এবারও নাহিদ অনুসারীরা দলের বিদ্রোহী রাবেলের পক্ষে ছিলেন বলে স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
এছাড়া দলীয় প্রভাবের বাইরে গোষ্টিভিত্তিক ভোটের জোরেও রাবেল এগিয়ে গেছেন বলে জানান তারা।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। এর মধ্যে তিন জনই আওয়ামী লীগের নেতা। অপরজন বিএনপির। শনিবারের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন পেয়েছেন চার হাজার ২২২টি ভোট।সূত্র- সিলেটটুডে