ওসমানীনগরে কালু খুন: গাঁজা না দেয়ায় শ্বাসরোধে হত্যা, ঘাতকের স্বীকারোক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের ওসমানীনগরে রিকশা চালক কালু হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন। গাঁজা না দেয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে জ্যাকেটের রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় কালুকে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেটের আদালতে ঘাতক হাসান মিয়া ওরফে মনাই(২৬) ফৌজদারি কার্য়বিধির ১৬৪ ধারায় আজ শনিবার সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
আদালতের বরাত দিয়ে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই রতন লাল দেব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের সাথে সড়াসরি জড়িত হাসান মিয়া ওরফে মনাইকে আজ শনিবার ভোর ৪টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার মীলপুর (মাঝপাড়া) এলাকা থেকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকটও একই ভাবে কালু হত্যার কথা স্বীকার করে হাসান। গ্রেফতারকৃত হাসান মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার মীলপুর (মাঝপাড়া) গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। হাসান দীর্ঘ দিন থেকে বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউপির সিরাজপুর(গহরপুর) গ্রামের ছহুল আহমদের গরুর খামারে কাজ করত।
পুলিশের বরাত দিয়ে আসামি হাসানের বজাবনবন্দি সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারী বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ চলাকালে রাত ৮টার দিকে মামলার ভিকটিম উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউপির শিওরখাল গ্রামের মৃত জাননু মিয়ার ছেলে রিকশা চালক কালু মিয়া (৬০) একই এলকার সিরাজপুর (গহরপুর) গ্রামের ছহুল আহমদ (৩২), পিতা-ছাদ উদ্দিন এর গরুর খামারের কাজের লোক আসামী মোঃ হাসান মিয়া প্রকাশ মনাই এক সাথে কালু মিয়ার রিক্সা যোগে ওসমানীনগর থানাধীন তাজপুর বাজারে উদ্দেশ্যে রওয়া হয়। পথিমধ্যে কালু মিয়া পাঁচপাড়ার দক্ষিণে পোস্ট অফিস নাম স্থানে দূর্ঘটনাবশত পথচারীর গায়ে রিক্সা তুলে দেয়। এ সময় কালু মিয়ার রিক্সাটি আহত ব্যক্তির শ্বশুর বাড়ীতে নিয়া আটক রাখা হয়। কালু ছাড়ার জন্য আসামী মোঃ হাসান মিয়া প্রকাশ মনাই অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে কালু মিয়ার রিক্সাটি আটক রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আসামী হাসান ও ভিকটিম কালু দুজনে পায়ে হেঁটে তাজপুর পৌছে এবং কালু মিয়া একা সরু একটি গলি দিয়ে ভিতরে যায়। ফিরে এসে কালু মিয়া বলে মাদ্রাসায় যাবে। তারা দুইজনে তাজপুর কদমতলায় পাঁয়ে হেঁটে কার ওয়াশের সামনে আসে এবং কালু মিয়ার কাছে ২৫০(দুই শত পঞ্চাশ) গ্রাম গাঁজা আছে মর্মে জানায়। কালু মিয়া বলে রাস্তার পাশে বসে গাঁজা খাবে। হাসান মিয়া প্রকাশ মনাই কালু মিয়ার কাছে গাঁজা চাইলে তাকে গাঁজা দেয় নাই। এদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে উল্লেখিত স্থানে কালু মিয়া সমস্ত গাঁজা একা খেয়ে কলকী ফেলে দেয়। তারপর তারা দুজনে পায়ে হেঁটে দয়ামীরের দিকে রওয়ানা হয়। কালু মিয়া গাঁজার নেশায় আচ্ছন্ন ছিল। হাওড়ের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাত সড়ে ১০টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউপির চক মন্ডল কাপন চকেরবন্দ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কস্থ মাহরা কনভেনশন সেন্টার হতে প্রায়৩০০গজ পূর্ব দিকে জনৈক জালাল মিয়ার জমিতে কালু মিয়া হুঁচট খেয়ে পড়ে যায়। এ সময় হাসান কালু মিয়ার কোন নড়াচড়া বা সাড়াশব্দ না পেয়ে কালু মিয়ার পরনে থাকা হুডি (মাথার ক্যাপ সহ জ্যাকেট) এর ফিতা ধরে কালু মিয়ার গলায় একটি গিট দিয়ে স্বজোরে টান দেয়। কালু মিয়াকে ঐ অবস্থায় ফেলে রেখে আসামী হাসান মিয়া প্রকাশ মনাই মাদ্রাসা বাজারে চলে যায়।
আসামী হাসান মিয়াকে আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূল জবানবন্দী প্রদান করে।
ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক কালু হত্যাকান্ডের উদঘাটনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামি হাসানকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হলে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, গত ২২ জানয়ারি উপজেলার দয়ামীর ইউপির চকমন্ডলকাপন এলাকারবন থেকে গলায় রশি পেছানো রিকশা চালক কালু মিয়া(৬০) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পর দিন নিহত কাল মিয়ার ছেলে মো. কয়েছ আহমদ জাহেদ বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় অজ্ঞতনামা আসামি করে একটি হত্যা (মামলা নং-১৭) দায়ের করেন।