উন্নয়নে মুগ্ধ মোমেন-তাজুল: মেয়র আরিফকে দুই মন্ত্রীর সহযোগিতার আশ্বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
মানুষের জন্য কাজ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেট নগরের দরগা এলাকায় আয়োজিত ‘উন্নয়নবিষয়ক মতবিনিময়’ সভায় মেয়র আরিফুল হককে এমন আশ্বাস দেন দুই মন্ত্রী।
এসময় দুই মন্ত্রী জানান, সিটি করপোরেশনের মেয়র কোনো দলের নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই যে মানুষের উন্নয়নে কাজ করবে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের হতে পারেন। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব্বোর্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তা না হলে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার মত বড় প্রজেক্ট বরাদ্দ করার কথা না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটের কয়েকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে মেয়র আরিফও বরাদ্দকৃত টাকা জনগণের উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছেন। এভাবে সরকারের টাকা সঠিক জায়গায় কাজে লাগালে আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
সিসিক মেয়র আরিফুল হককে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘মেয়র ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হলেও তার আজকের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রেজেন্টশনে তিনি যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে তুলে এনেছেন তাতে আমার মনে হয় তার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সকল বাঙালিরই হৃদয়ে ভালোবাসা থাকতেই হবে। কারণ তিনিই আমাদের একটি দেশ ও স্বাধীনতা দিয়েছেন।’
মেয়রকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই শহর মানুষের জন্য। শহরে মানুষের সমস্যা কোথায় খুঁজে বের করুন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও খেলার মাঠ আছে কি না, আরও লাগবে কি-না তা খুঁজে বের করেন। টাকা কোথা থেকে আসবে তা দেখার বিষয় নয়। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে টাকা আসবে, কাজ হবে। কোনো কাজই আটকে নেই আর থাকবেও না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের প্রথম ম্যাজিক হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর দ্বিতীয় ম্যাজিক হচ্ছে জনগণ। জনগণ হচ্ছে আমাদের সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। এই সম্পদকে কাজে লাগাতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য সিলেটে যে প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু থাকলে ২০০০ সালেই বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়ে যেত। তাকে হত্যা করে একটি গোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বাধাগ্রস্থ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশে ক্ষমতায় এসে দেশের হাল ধরেছেন। পিছিয়ে পড়া অর্থনীতিকে আবারও চাঙ্গা করেন। সেসময় অসহায় মানুষকে মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে দিনরাত কাজ করেছেন ‘
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মানুষের জীবনমান অনেক উন্নতি হয়েছে। ২০০৮ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলার। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিকের কারণে। পদ্মা সেতুর কাজও আটকে যাবে বলে একটি পক্ষ গুজব রটিয়েছিল। কিন্তু কেউ আটকাতে পারেনি। শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন তার সরকার সব পারে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, ‘সিলেটের শিক্ষার অবস্থা খুব খারাপ। সিলেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। শিক্ষার হার বাড়াতে হলে আমাদের সবার কাজ করতে হবে। বাড়াতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কারণ সিলেটে চাহিদার তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব কম। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই কম।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিলেট নগরে খেলার জন্য মাঠ নেই। এজন্য আমার দুঃখ হয়। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে যদি আমরা যদি দেখি তাহলে কয়েকটা মাঠ থাকে। যেগুলোতে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করছে। তবে আশার খবর হলো— জেলা প্রশাসন নগরীর কালোপাথরের মাঠটিকে নির্বাচন করেছেন। এজন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলছে। তবে আমি বলেছি আরও দুই-তিনটি মাঠের জায়গা খুঁজে বের করার জন্য।’
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনমান খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করছে ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের ভালো জীবনের জন্য ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে আমরা প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাসানচরে স্থানান্তর করব। ইতোমধ্যে কিছু স্থানান্তর করা হয়েছে। আর আজ (গতকাল) আরেক দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি এনজিও ভাসানচরে স্থানান্তরে বিরোধীতা করে আসছে। কিন্তু আশার খবর হলো— সিঙ্গাপুর ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য আজ গিফট পাঠিয়েছে। যারা রেগুলেশনে বারবার আমাদের বিরোধিতা করেছিল। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পরে সিঙ্গাপুরও আমাদের সাহায্য করছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য সুখবর।’
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. মসিউর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ সিটি করপোরেশনের সকল কাউন্সিলরগণ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।