সিলেটে ভোট নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
শেষ মুহূর্তে ‘শঙ্কা’ দেখা দিয়েছে সিলেটের পৌরসভা নির্বাচনে। এ কারণে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই প্রশাসনের তরফ থেকে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি ছাড়াও টহল জোরদার করা হয়েছে। গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ পৌরসভা এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। ১৮টি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রশাসন। গতকাল বিকালে জকিগঞ্জের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইকবাল আহমদ অভিযোগ করেছেন, জকিগঞ্জে অনেক বহিরাগত অবস্থান করছে। এ কারণে কখন কী ঘটে সেটি বলা মুশকিল। সিলেটের দু’টি পৌরসভায় মোট ১২ জন মেয়র প্রার্থী, ৮০ জন পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৯ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জে ৪ জন ও জকিগঞ্জে ৮ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
ভোটাররা জানিয়েছেন, এ দু’টি পৌরসভা নির্বাচনে প্রতীকের চেয়ে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে স্থানীয় প্রভাব। এ কারণে এবার প্রধান দু’টি দলের প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থা সুসংহত। গোলাপগঞ্জে গতকাল বিকাল পর্যন্ত আলোচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুই প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল ও সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। এলাকা ভিত্তিক ভোটের প্রভাবে দু’জনই সুসংহত অবস্থান রয়েছেন। শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শাহীন। বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। কেবলমাত্র প্রশাসন নিরাপেক্ষ ভূমিকা রাখলে ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহেল আহমদ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন। জকিগঞ্জে ভোটের আগে থেকেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোটারদের মতে, এ পৌরসভায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই প্রধান দুই দলের প্রার্থী। কারণ ফুলতলীর পীরের অনুসারী আল ইসলাহ প্রার্থী হিফজুর রহমানের এখানে ভোটব্যাংক রয়েছে। আর সাবেক মেয়রের ছেলে হওয়ার কারণে যুবলীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক আব্দুল আহাদকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। এ পৌরসভায় নৌকা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বর্তমান মেয়র নৌকার প্রার্থী আলহাজ খলিলুর রহমান। আব্দুল আহাদের কারণেই তিনি এবার চ্যালেঞ্জের মুখে। ফলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদ জানিয়েছেন, বহিরাগতরা জকিগঞ্জে অবস্থান করায় শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তিনি প্রশাসনকে আরো সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। জকিগঞ্জ পৌর শহরের কেজি স্কুল, এফআইভিডিভি কেন্দ্র, কলেজ কেন্দ্র নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা।
সিলেট জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (মিডিয়া) লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন- পুলিশ সতর্ক রয়েছে। দু’টি পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী সাজানো হয়েছে নির্বাচনী ছক। পুলিশ নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রাখছে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যা যা প্রয়োজন সব করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রশাসক সূত্র জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জে থাকছে তিনস্তরের নিরাপত্তা।
গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহন চলাচল বিধিনিষেধের আওতায় আসছে। ভোটকেন্দ্র বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা ঠেকাতে দু’টি পৌরসভায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। মাঠ পর্যায়ের ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় দু’জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া এই দু’টি পৌরসভায় ২ প্ল্যাটুন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন আনসার সদস্যরা। ভোটকেন্দ্রে পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ ঠেকাতে সাদা পোশাকের পুলিশও থাকছে। র্যাবের ৮টি টিমও ভোটকেন্দ্রে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে।