প্রবাসীদের সাথে ধারাবাহিক দুর্ব্যবহার : নির্লজ্জ এই জাতির কান্ডজ্ঞান ফিরবে কবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪০:৫৫,অপরাহ্ন ২৭ জানুয়ারি ২০২১
ইকবাল হাসান জাহিদ:
প্রবাসীরা নিজের রক্তকে পানি করে দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য রেমিটেন্স পাঠান। মা-বাবা, বাচ্চাকাচ্চা-স্ত্রী, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে রেখে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, এমনকি যুগের পর তারা দূরদেশে কাটিয়ে দেন। শুধুকি তাই? এমন লক্ষ লক্ষ পরিবার আছে যারা জানেন যে, তারা জীবনেও দেশে ফিরবেন না, তবুও দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য, দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য টাকা পাঠাতে থাকেন সারাজীবন ধরে।
মাসে ২লক্ষ টাকা ইনকাম করলে নিজের পরিবার কিংবা আত্মীয় স্বজনের জন্য ১ লক্ষ টাকা দেশে পাঠিয়ে দেন। স্কুল-মাদরাসা-মসজিদের জন্য পাঠিয়ে দেন ১ চতুর্তাংশ। বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থায় পাঠিয়ে দেন যাকাত ফিতরার টাকা। সবই নিজের দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তারা করেন।
প্রতি বছরে তাদেরই এই হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স দিয়ে দেশ তার কোমর সোজা করে টিকে থাকে। বিশ্বব্যাপী করোনার এই মহাদুর্যোগে রেমিটেন্সের টাকা না হলে আফ্রিকার সোমালিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনের চেয়েও বেশি দুর্ভিক্ষে পতিত হতো এই দেশ। অসংখ্য মানুষ হয়তো না খেয়েই মৃত্যুবরণ করতে হতো।
যেখানে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক চাকাও স্থবির হয়ে গিয়েছিলো, সেখানে দেশের ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের জীবনকে বাজী রেখে প্রবাসী নামের সোনার মানুষগুলো দেশে টাকা পাঠিয়ে দেশের মেরুদণ্ড দন্ডয়মান রেখেছেন।
কিন্তু কই? তাদের এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ আর কঠিন পরিশ্রমের মূল্যায়ন কি আমরা করতে পারছি? আমরা কি তাদেরকে কোনো দিক থেকে আলাদা করে সম্মান দেখাতে পারছি? না! বরং বিমানবন্দরের মতো নিরাপদ জায়গায়ও তাদের সাথে করছি দুর্বব্যহার। বিমান বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অথর্ব মুর্খরা করছে আমার দেশের সোনার মানুষগুলোর সাথে ফাইজলামী। এই অথর্বরা যদি বুঝতো বিশ্বব্যাপাী এই মহাদুর্যোগের সময় প্রবাসীদের রেমেটেন্সেই তাদের রুটি রুজির পথ এখনও রুদ্ধ হয়নি, তবে হয়ত তারা এতকিছু করতো না।
দুঃখজনক হলেও সত্য বারবার এই প্রবাসীরা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করোনা টেস্টের নামে তাদের সাথে যে দুর্ব্যবহার, আসা-যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তাদের সাথে যে আচরণ তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গত কয়দিনে সিলেট বিমান বন্দরে যা ঘটেছে তা শুধুই দুঃখজনক নয়, বরং রীতিমতো উদ্বেগজনকও। এভাবে করতে থাকলে প্রবাসীরা দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের যে ভালোবাসা, দেশের প্রতি তাদের যে দরদ, দেশের মানুষের প্রতি তাদের যে আন্তরিক টান সব ধুলোয় মিশে যাবে।
প্রবাসীরা যদি এক বছর দেশে রেমিটেন্সের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন, তাইলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এদেশে লক্ষ লক্ষ পরিবার পথের ফকির হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। কারণ এসব পরিবার একমাত্র প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সেই চলে। সূতরাং ফাইজলামী করার জন্য অন্য বহু সেক্টর আছে। ওদের সাথে করেন।
প্রবাসীদের সকল প্রকার অধিকার রক্ষার জন্য সিলেটসহ দেশের সকল জেলার মানুষ সোচ্চার হোন। প্রবাসীরা বাঁচলে, প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা হলে, প্রবাসীরা ভালো সুযোগ পেলে বেঁচে যায় দেশের সাধারণ মানুষ। উন্নত হয় দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান। উন্নত হয় দেশ।
লেখক : ইকবাল হাসান জাহিদ
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)