করোনায় মৃত্যুকূপ ব্রিটেন: চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে বাঙ্গালীসহ কয়েক হাজার রেস্তোরাঁ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৮:৩৮,অপরাহ্ন ২৩ জানুয়ারি ২০২১
711 - 711Shares
সুরমা নিউজ:
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালে বৃটেনে প্রায় ১০ হাজার বেশি পাব, ক্লাব এবং রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থা এলিক্সপার্টনার্স ও সিজিএর এক যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বৃটেনজুড়ে ৯ হাজার ৯৩০টি লাইসেন্স করা পাব, ক্লাব ও রেস্টুরেন্ট চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের প্রথম অংশের তুলনায় শেষ অর্ধেকে অধিক সংখ্যক ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। মূলত কঠিক লকডাউনের কারণেই এই ধস নামে বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ৩৯.৩ ভেন্যু চিরতরে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। প্রথম লকডাউনের প্রভাবে এই অবস্থা হয়। এরপরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে আরেকটা বড় ধাক্কা আসে।
এই সময়ে আরো ২৬ শতাংশ ভেন্যু বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে সিজিএ’র কর্মকর্তা কার্ল চেসেল বলেন, এরকম এক নিরানন্দ বড়দিনের পর বাজার নিয়ে আশান্বিত হওয়া কঠিন। তবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলতে থাকলে দ্রুতই সেবা খাত দাড়াতে শুরু করবে। তিনি আরো বলেন, মানুষ এখন বাইরে গিয়ে খেতে ও পান করতে প্রবলভাবে উৎসাহী। আমরা আশা করতে পারি, কড়াকড়ি উঠে গেলে এই খাত ঘুরে দাঁড়াবে।
লন্ডনের কাছে কেন্ট কাউন্টির একটি আবাসিক এলাকায় ২৮ বছর ধরে চলছে মিঠু চৌধুরির বাংলাদেশি কারি রেস্তোরাঁ- মোগল ডাইনাস্টি। তিনি ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর অতিথির (কাস্টমারের) সংখ্যা দ্রুত এত কমতে থাকে যে সরকারি নির্দেশনার আগে থেকেই তাকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে হয়।
এ বিষয়ে চরম হতাশা নিয়ে মিঠু বলেন, ‘আমার ৩৪ বছরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এমন সঙ্কট আমি আগে কখনো দেখিনি।’ এখন টেক-অ্যাওয়ে অর্থাৎ অনলাইন এবং টেলিফোনে খাবারের অর্ডার নিয়ে মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়ে রেস্তোরাঁটি চালু রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি জানান, বিক্রি কমে গেছে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। তার ১৬ জন কর্মীর মধ্যে সাতজন নিয়ে কাজ করছেন। বাকি নয়জন বাড়িতে বসে আছেন। তিনি আরও জানালেন, কারি রেস্তেরাঁ শিল্পে সাপ্লায়ারদের সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা এক জরিপে তারা দেখেছেন, কয়েক হাজার রেস্টুরেন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে আছে অনেক বাঙ্গালী রেস্তোরা । তিনি বলেন, ‘সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বলেছেন, ব্যবসা বন্ধ রেখে ভাড়া গোনা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে ভবন মালিকের হাতে চাবি দিয়ে এসেছেন।’
কম-বেশি এমন চিত্র এখন ব্রিটেন জুড়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারি রেস্তোরাঁয়। লন্ডনের ব্রিক লেন এলাকাটি ব্রিটেনের কারি ক্যাপটাল নামে পরিচিত। সার সার বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁর প্রায় সবগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তালা। দুই-একটি গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যায় টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছে।
বার্মিংহামের রাজনগর রেস্তোরাঁর কর্ণধার গোলাম মওলা বলছেন, রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার পরও তা চলবে কিনা তা নির্ভর করছে সরকার যে সব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা হাতে আসে কিনা তার ওপর। তিনি বলেন, ‘আমার দুটো রেস্টেুরেন্টই সবসময় লাভজনক। দুটো ব্যাংকের কাছে লোন চেয়েছিলাম। একটি দিয়েছে, অন্যটি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি তো স্টাফের বেতন কমাতে পারবো না? ভাড়া বছরে ৮০,০০০ পাউন্ড, তা কি কমবে? ট্যাক্স কি কমবে? যে কাস্টমার আগে পেতাম তারা কি সবাই আসবেন?’
লন্ডনের পাশে এসেক্স কাউন্টিতে এভিলি নামে ছোটো একটি গ্রামে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ‘টেস্ট অব এভিলি’ নামে ৬২টি সিটের একটি মাঝারি আকারের কারি রেস্তোরাঁ চালান ওয়াহিদুর রহমান। রেস্তোরাঁ বন্ধ কিন্তু তিনিও টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছেন। তিনি জানান, ‘টেক-অ্যাওয়েতে লাভ হয় না। কাস্টমার ভেতরে ঢুকে টেবিলে না বসলে বিক্রি বাড়ে না। তবুও শুধু গ্রামের কাস্টমার ধরে রাখতে টেক-অ্যাওয়ে চালাতে হচ্ছে।’ আট জন স্টাফের চার জনকে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি। মি রহমান ভয় পাচ্ছেন, রেস্তোরাঁ খুললেও সহসা মানুষজন আসবেন না।
বাংলাদেশ ক্যাটারারাস আ্যসোসিয়েশনের মিঠু চৌধুরি বলছেন, সরকারের উঁচু পর্যায়ে তাদের সমিতির যে কথাবার্তা হচ্ছে, তা থেকে তারা ধারণা পেয়েছেন যে জুন মাসের মাঝামাঝি হয়তো রেস্তোরাঁ-বার খুলতে পারে। তিনি বলছেন, ২১শে মে’র দিকে হয়তো এ ব্যাপারে একটি ঘোষণা আসতে পারে, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা সহ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হতে পারে। ব্রিটেনের হাজার হাজার উদ্বিগ্ন কারি রেস্তোরাঁ মালিক এখন এসব প্রশ্নেরই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।
711 - 711Shares