ওসমানীনগরে অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৬:৫৭,অপরাহ্ন ১৪ জানুয়ারি ২০২১
সুরমা নিউজ:
সিলেটের ওসমানীনগরে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমানুষিক নির্যাতনে সুচন্দা রানী দেবনাথ (২৬) নামের ১০ মাসের অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ নিহত হয়েছেন।
নিহত গৃহবধূ উপজেলার দয়ামীর ইউপির নিজ কুরুয়া গ্রামের রাজকুমার দেবনাথের ছেলে বিধান দেবনাথের স্ত্রী। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই দোল গবিন্দনাথ বাদী হয়ে নিহতের স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর, ননদসহ ৬ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিলেট মেট্রোপলিটনের শাহপরান থানায় গত মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার ওসমানীনগর থানা পুলিশ নিহত গৃহবধূ সুচন্দার লাশ তার শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নিহত গৃহবধূর ভাই দোল গবিন্দনাথ অভিযোগ করে জানান, উপজেলার দয়ামীর ইউপির নিজ কুরুয়া গ্রামের রাজকুমার দেবনাথের ছেলে বিধান দেবনাথের সাথে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউপির গাজীপুর গ্রামের দিগেন্দ্র চন্দ্র নাথের মেয়ে সুচন্দা দেবনাথের বিয়ে হয় গত বছরের ১৩ মার্চ।
বিয়ের সময় বরকে স্বর্ণালংকার, ফার্নিচার, ফ্রিজ, টিভি, বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্রসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করে আমাদের পরিবার। বিয়ের পর কিছু দিন ভালোভাবে সুচন্দার সংসার চললেও এক সময় নিহত সুচন্দার শাশুড়ি রাজকুমার দেবনাথের স্ত্রী স্বর্ণা রানীনাথ, ননদ শিপ্রা রানীনাথ, রত্না রানীনাথ, ভাসুর বিকাশ দেবনাথ, ননদের স্বামী মিন্টু দেবনাথের যোগসাজশে নিহতের স্বামী বিধান দেবনাথ দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। সুচন্দার পরিবারের পক্ষ থেকে যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে গৃহবধূর স্বামীর পরিবার সুচন্দার ওপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালায়।
এরই মধ্যে সুচন্দা ১০ মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে। গত ২ জানুয়ারি সন্তান প্রসবের সময় দিয়েছিলেন চিকিৎসক। সুচন্দার গর্ভে কন্যাসন্তান আসায় যৌতুকের রেশ আর কন্যাসন্তানের কারণে সুচন্দার পরিবার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বলে একাধিকবার সুচন্দা তার বাবার বাড়ির লোকজনদের জানান। গত ১০ জানুয়ারি হতে ১১ জানুয়ারি বিকাল ৩টা পর্যন্ত ডেলিভারি করার মিথ্যে অজুহাতে সুচন্দার ননদ রত্না রানীর স্বামী মিন্টু চন্দ্রনাথের শাহপরানের বটেশ্বর দেইলপাড়ার বাসায় রাখা হয় সুচন্দাকে। সেখানে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সেবন করিয়ে এবং বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে আমার বোন সুচন্দা ও তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করে তারা।
১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুচন্দার ভাসুর ফোনে আমাকে খবর দেয় আমার বোন মারা গেছে।
ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বলেন, আমরা নিহত গৃহবধূর লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। শাহপরান থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে।
শাহপরান (রহ.) থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।