জাগির হোসেন:
সিলেট-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ফেরিঘাট এলাকায় আরবি ‘আল্লাহ’ শব্দ লেখা স্থাপত্যশিল্প দৃষ্টিনন্দন চত্বর করায়, শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক, তাঁর (এমপি) সময়কালে দেশের প্রথম বৃহৎ ৭তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল করায় একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহমুদ উস্ সামাদ চৌধুরীর নাম আগেকার অন্যান্য মুসলিম শাসকদের মত স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
স্থাপত্যশিল্পের কিছু ইতিহাসঃ- রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর খোলাফায়ে রাশেদা, উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে মুসলিম সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে তার জীবনযাত্রার মানও উন্নত হতে থাকে। এ সময় মুসলিম বিশ্ব ইউরোপ, পারস্য ও ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হওয়ায় উন্নতমানের পণ্যের চাহিদাও তৈরি হয় মুসলিম বিশ্বে। বিশেষত আব্বাসীয় শাসকরা বহু শিল্প ও কারিগরি বিদ্যার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প ও প্রকৌশলে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। মুসলিম শাসকরা বিশ্বের কম বেশী সব শিল্পের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তন্মেধ্যে, স্থাপত্যশিল্পে মধ্যযুগের উমাইয়া শাসকদের শুরুর সময় থেকে এই শিল্প মুসলিম শহর-বন্দর-নগরে বিকশিত হতে থাকে। এরপর আব্বাসীয়, উসমানীয়, সেলজুক, ফাতেমি ও মোগল শাসকরা স্থাপত্যশিল্পে অসামান্য অবদান রাখেন। মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিকাশে শাসকদের বিলাসিতার প্রমাণ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি শহর রক্ষাকারী দুর্গ, দৃষ্টিনন্দিত রাস্তাঘাট(চত্বর), দৃষ্টিনন্দন মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে তাদের সুরুচি, উচ্চ মনোবল ও উদারতার পরিচয় পাওয়া যায়। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার যেসব অঞ্চল মুসলিমরা শাসন করেছিল, যেসব অঞ্চলে এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপত্যশিল্পের অনেক বিস্ময় ও অহংকার। স্পেনের আল-হামরা প্রাসাদ ও কর্ডোভা মসজিদ, সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদ, মিসরের আল-আজহার, ভারতের লালকেল্লা, তাজমহল ও ফতেহপুর সিকরি, তুরস্কের টোপাকোপি প্রাসাদ, আয়া সুফিয়া মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে পৃথিবীর বুকে টিকে আছে। যা থেকে স্থাপত্যশিল্পে মুসলমানদের অবদান স্পষ্ট হয়। কালের আবর্তে ওইসব স্থাপত্যশিল্প ধ্বংস হতে লাগলেও, নতুন সাঁজে একবিংশ শতাব্দীতে এমপি সামাদ চমক দেখিয়ে মুসলিম শাসকদের উত্তরাধিকার হয়ে সেটার পুনরুত্থান ঘটিয়ে ইতিহাসের নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০(মঙ্গলবার)সন্ধ্যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মোনাজাতের মাধ্যমে এই চত্বরের উদ্বোধন করেন। শুরুতে সুইচ টিপে চত্বরের আল্লাহ শব্দের আলো প্রজ্বলন করে এমপি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। এই শতাব্দীতে শুধু স্থাপত্যশিল্প নিদর্শন করে শেষ করেননি- আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত, তাদের চিত্ত বিনোদনের সুযোগ, তারা দেশের সুনাগরিক হিসেবে দেখতে, শিশুদের লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীল চর্চার সুযোগ করে দিতে, এমনকি তাঁদের মন মানুষিকতা শিশুকাল থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকার কথা চিন্তা করে সিলেট ৩ আসনের সংসদ সদস্য, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব (স্থানীয়) মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকায় শেখ রাসেল শিশু পার্ক করে সর্বমহলের কাছে প্রসংশীত হয়েছেন। ২০২০ সাল আমাদের কাছ থেকে বিদায়ের পাশাপাশি সময়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন সুযোগ না থাকায় ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তীরে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শেখ রাসেল শিশু পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এমপি। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলার ১৮কোটি মানুষের ১৮ কোটি মস্তিষ্ক, ৩৬কোটি হাত নিজ নিজ মেধা থেকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিচ্ছেন। তন্মেধ্যে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমপি সামাদ চমকপ্রদ শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছেন। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেছিলেন সেদিন- এই পার্কটি উদ্বোধন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা কোমলমতি শিশুদের লেখা পড়ার পাশাপাশি যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন ফলে শিশুদের ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে অভিভাবকদের আরো যত্ববান হওয়ার আহবান করেন। মুসলিম সভ্যতায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস হাজার বছরের প্রাচীন। হাসপাতাল ব্যবস্থায় তখন চিকিৎসা, ভ্রমণ, আশ্রয় ও অবসরকালীন পুনর্বাসন ও জীবনযাপন সুযোগ-সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব ধরন ও প্রকারের রোগীর দেখাশোনা, তত্ত্বাবধান করত। কারণ মুসলমানরা বিশ্বাস করে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যে কেউই হোক না কেন; অসুস্থদের সেবা-চিকিৎসা দেওয়া বিপুল পুণ্যময় ও সম্মানজনক। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম সকালবেলা কোনো রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করে, ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলা শুশ্রুষা করতে যায়, সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তাকে একটি বাগান দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৯) বিভিন্ন ধরনের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় মুসলিম শাসক: ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে রয়েছে, উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান (৬৪৬-৭০৫) বিপুল অর্থ ব্যয় করে একটি বিশাল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন খলিফা ওয়ালিদ ইবনে মালিক (৬৬৮-৭১৫)। তখনকার সময়ে প্রতিথযশা বিজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। রোগীর শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথক পৃথক বিভাগ ছিল। প্রতিটি বিভাগের জন্য ছিল ওই বিষয়ের পারদর্শী চিকিৎসক। তারা সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিতেন। রোগীর বাড়তি সেবার জন্য ছিল নার্স। পুরুষ ও নারীর জন্য ছিল আলাদা-আলাদা কক্ষ।