বসনিয়ায় তুষারপাতে পর্যুদস্ত শরণার্থী শিবিরের বাংলাদেশিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ২:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইউরোপে তুলনামূলক কিছুটা আগে শীত এসেছে। বুধবার থেকেই এ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে তুষারপাত শুরু হয়েছে।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভেলিকা ক্লাদুসার শরণার্থী শিবিরে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মাঝেও নেমে এসেছে বাড়তি দুর্ভোগ। গত সেপ্টেম্বরে রয়টার্সে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গলে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দুর্দশার কথা এ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে।
মূলত ইউরোপিয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশের সীমানায় প্রবেশের জন্য তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়া এবং সেখান থেকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের তৎপরতার কারণে তাদের বাধ্য হয়ে আবার বসনিয়ায় ফিরে আসতে হয়।
শীতের প্রাদুর্ভাব ভেলিকা ক্লাদুসার শরণার্থী শিবিরে আটকে পড়া বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত এসব শরণার্থী শিবিরে যেখানে জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়াটা অনেকটা দুষ্কর, সেখানে শীত নিবারণের জন্য যথার্থ প্রস্তুতির চিন্তা করা আকাশ-কুসুম কল্পনা।
স্থানীয় এনজিও ‘নো নেম কিচেনের’ হয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী আলবা ডোমিঙ্গুয়েজ পেনা বলকান ইনসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, অতীতে বাংলাদেশিদের শরণার্থী শিবিরে ১০০ জন বসবাস করতেন। কিন্তু বুধবারের তুষারপাতের পর সেখান থেকে অনেক শরণার্থী অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বতর্মানে তারা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। তীব্র শীতে তাদের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আগে তাদের অনেকে একটি পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা যেখানে অবস্থান করছেন সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি ওই ফ্যাক্টরির তুলনায় অনেক বেশি শোচনীয়।
নূরুল হুদা হাবীব নামের বসনিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানান, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বসনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। তাই শরণার্থীদের কেউই বেশি দিন বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনাতে থাকতে চান না। মূলত অবৈধভাবে ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স কিংবা পর্তুগালে প্রবেশের জন্য তারা বসনিয়ায় আসেন। তাদের অনেকে ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় সেখানকার পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের অনেকে সিরিয়ান কিংবা পাকিস্তানি বা আফগান শরণার্থীদের দ্বারা ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের শিকার হন। তাই বসনিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক জোরদার করে এ রুটে মানবপাচার রোধের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও এসব বাংলাদেশি শরণার্থীদের মানবিকভাবে সহায়তা করার জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি আহ্বান জানান।