আমজনতা আর কত ব্রেইনওয়াশ হলে চিনবেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৪:৩৮,অপরাহ্ন ০১ ডিসেম্বর ২০২০
শেখ ইয়াহইয়া:
বিনয়ের সাথে বলি, যুক্তি তর্কে নয় বরং জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে ভাস্কর্য শিল্পের সৌন্দর্যে স্বাধীন বাংলার স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুপ্রেরণায় বিকশিত হোক আমাদের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ধর্ম,বর্ণ,দলমত সহ সকলের প্রাণের চেয়েও প্রিয় এই ডিজিটাল বাংলাদেশ। আসুন সবাই মিলে একসাথে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে মহান করে তুলি ।
গত কয়দিনে মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা ফয়জুল করীম চরমোনাইয়ের কথায় যারা ভাস্কর্যকে মুর্তি বানিয়ে ধর্মের দোহায় দিয়ে আপনাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করছেন তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি। প্লিজ আপনারা একটিবার এই ২ জনকে জিজ্ঞেস করে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করুন নতুবা ওদের বিরুদ্ধে আপনি/আপনারাও সত্যের আওয়াজ তুলুন।
যখন বিএনপি জোট সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খালেদা জিয়ার স্বামী তারেক রহমানের পিতা জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল তখন বর্তমান ইসলামী দলগুলো বিএনপির জোটের চারদলীয় ঐক্যজোটের সরকারে ছিল। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আমাদের মহানবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ আল্লাহর বাণী ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনে কিংবা আল্লাহর রাসুলের হাদিসে বিএনপি জোট সরকারের আমলে কী এইসব ভাস্কর্যেররেফারেন্স গুলো ছিল না যেগুলো এখন প্রকাশিত হচ্ছে!!!
মাওলানা মামুনুল হকের মরহুম আব্বা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক সাহেব ও মাওলানা ফয়জুল করিমের আব্বা মরহুম মাওলানা ইসহাক সাহেবের ছেলে মরহুম মাওলআনা ফজলুল করিম সাহেব কী কোরআন হাদিসের এইসব রেফারেন্স গুলো পড়েন নাই? তারা কী এইসব আগে পান নাই ঐশী গ্রন্থে ? বিএনপি জোট সরকারের শরিক ইসলামী দলগুলো তখন তো ক্ষমতায় ছিলো সংসদে বিল পাশ করতে পারতেন এই বিষয়ে কোরআন হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে! তখন চুপ ছিলেন কেন উনারা!! নাকি এখন তাদের বাবাদের থেকে মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম বেশি জ্ঞানী হয়ে গেলেন? উনারা দুজনেই নিজেদের জন্মদাতা পিতাদের মুর্খ হিসাবে প্রমান করতেছেন! সারা দেশের গত হওয়া সকল কোরআন হাদিস বিশারদদের অজ্ঞ হিসাবেই প্রমাণ করছেন না?
আমজনতা আর কত ব্রেইন ওয়াশের শিকার হলে এইসব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের চিনবেন/জানবেন?
ওদের সব সমস্যা কেবল বাঙ্গালী জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। উনারা ভাল করেই জানে বাঙ্গালীর অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আটকে দিলেই এইদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আটকাতে পারবে (যদিও এর আগেও অনেকেই চেষ্টা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বাঙ্গালীদের একটুও নড়াতে পারেন নাই বরং মানুষ আরো বেশি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে) ।
আমি সাদামাটাভাবে আপনাদের মত বিশ্বাস করি মামুনুল হক সাহেব ও ফয়জুল করিম সাহেব ও তাদের অনুসারীরা আমাদের মা মাটি মানুষের প্রাণের চেয়েও প্রিয় দেশটাকে আবারো পাকিস্তানের মত বোমা বিস্ফোরণে মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতে পারবেন কিংবা ৩০ লক্ষ শহিদ আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে টানা ৫ বার দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন করার লজ্জা অর্জন করতে পারবেন। ১৯৭১ সালের মত আপনার মা বোনকে গনিমতের মাল মনে করে উনারা ভোগ করতে পারবেন কিংবা পাকিস্তানের হিংসে সৈন্যবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে খুশি করতে পারবেন এর বাহিরে আর ভালো কিছু করার ক্ষমতা নাই উনাদের তা ইতিমধ্যে বহুবার প্রমান হয়ে গেছে ।
ধিক্কার জানানোর মত ভাষা আমার জানা নাই! আপনাদের কাছে এইসব ভন্ডদের মুখোশ বারবার খুলে দেওয়ার পরেও ওদের অন্ধ বিশ্বাস করে নিজেদের হীনমন্যতা প্রকাশ করতেছেন। প্লিজ আবার চিন্তা করুন বিষয়টি। যারা নিজেদের জন্মদাতা বাপদের আজ প্রশ্নের সম্মুখীন করে তাদের বড়ত্ব দেখাচ্ছে তারা কী ঠিক না আপনারা আমজনতা গর্বিত বাঙ্গালী ঠিক?
বিশ্বের বুকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় রুল মডেল বিবেচিত হচ্ছে।
এইদেশের মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই নিজ ধর্ম নিরাপদে পালন করে সামাজিকতায় সব ধর্মই একে অপরের পরিপূর্ণ সহায়ক হিসাবে খুব বেশি শান্তি শৃঙ্খলায় জীবনযাপন করছেন। এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে মানুষের!? দেশ বিরোধী অপশক্তিদের তা সহ্য হচ্ছে না তাই বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন অমানুষের রুপে বাংলার মা মাটি মানুষদের অশান্ত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করছে প্রতিনিয়ত।
উপরোক্ত লিখাটি পড়ে দয়া করে কেউ আমায় নাস্তিক ট্যাগ দিয়েন না কারণ আমি মনেপ্রাণে একজন মুসলিম। আমিও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বিশ্বাস করি। কেউ নাস্তিক ট্যাগ দেওয়ার আগে বুঝে নেন ঐশী গ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনে উল্লেখিত হযরত জাকারিয়া (আঃ) নবীর ছেলের নাম ছিল ইয়াহইয়া (আঃ) । যিনি সকল নবী রাসুলদের মাঝে সর্ব কনিষ্ঠ নবী ছিলেন। আমি মুসলিম হিসাবে আল্লাহ ও রাসুলের ইসলাম মানি কিন্ত কোথাকার কোন হেফাজত-জামায়াত-জমিয়ত-খেলাফত-শাসনতন্ত্র নামের ভ্রান্ত ইসলামী দল ও ব্যাক্তিদের মতবাদ কেন মানব!?
ভাস্কর্য মানব রচিত একটি সৃষ্টিশীল সৌন্দর্য। সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, তুরষ্ক, মিশর, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন,কুয়েত,বাহরাইন,আবুদাবী,বসনিয়া,চেচনিয়া,ফিলিপাইন,সোমালিয়া,লেবানন,ইন্দোনেশিয়া, আরকান সহ বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম শহরে তাদের জাতির পিতা কিংবা জাতীয় বীর,জ্ঞানী ও বরেণ্য ব্যাক্তিবর্গের ভাস্কর্য শত শত বছর আগে থেকেই নির্মিত হয়েছে (কমেন্টে ছবিগুলো দিলাম)। সেইসব দেশে মামুনুল হক কিংবা ফয়জুল করিম চরমোনাই থেকেও আরো বড় জ্ঞানী-পণ্ডিত লোক ছিলেন/আছেন। আল্লাহ আপনাদের সঠিক বুঝ দান করুন এইটাই কামনা করি।
আপনাদের ভাগ্য ভাল বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নীলকন্ঠি বলেই ধৈর্য্য ধরে সবকিছু অবলোকন করছেন। উনি যদি একটু ইশারা দেন তাহলে দেশদ্রোহী ষড়যন্ত্রকারী কেউ-ই আর পালাবার পথ খুজে পাবেন না। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ভালো হয়ে যান। ক্ষমা চাওয়ার এমন সুযোগ হয়ত আগামীতে আর নাও পেতে পারেন।
লেখক: শেখ ইয়াহইয়া, ছাত্রলীগ নেতা।
(সুরমানিউজ’র মুক্তমত ও পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না।)