রায়হানের কবরেও লেখা হলো পুলিশের নির্যাতনের কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১১:৫৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যাকাণ্ডের রেশ এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে সেখানকার বাতাসে। পুলিশের হেফাজতে নির্মম এ হত্যাকাণ্ড শুধু তার স্বজনদেরই আপ্লুত করেনি, সিলেটের সচেতন মহলও হত্যার প্রতিবাদে হয়েছে সোচ্চার। যে যার অবস্থান থেকে করেছেন প্রতিবাদ। তারই প্রমাণ মিলল রায়হানের কবরে। তার কবরে ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা একটি বিষয় এরইমধ্যে সবার নজরে এসেছে। যাতে লেখা রয়েছে মৃত্যুর দিনক্ষণ, সেই সঙ্গে লেখা রয়েছে পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যুর কথাও।
গত ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে রায়হানকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। ওইদিন সকালে তিনি এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। নির্যাতন করার সময় তৌহিদ মিয়া নামে এক পুলিশ সদস্যের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের লাশ শনাক্ত করেন।
রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরীর কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি লাশ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রায়হানের শরীরে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। আঘাতগুলো লাঠি দিয়েই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হান মারা যান।
এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
এর আগে, রায়হানের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বহীনতার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এরমধ্যে এসআই আকবর ১৩ অক্টোবর সকালে পুলিশ লাইন থেকে পালিয়ে যান।