বেআইনীভাবে হাওরখাল বিলের রাজস্ব পরিশোধের অভিযোগ, কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ৮:০০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
বড়লেখায় ৬ বছর ধরে মামলা মোকদ্দমার বেড়াজালে আটকিয়ে এক প্রভাবশালী হাকালুকির গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মদদপুষ্ট মৎস্যজীবি সমিতি সম্প্রতি আদালতের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ, সরকারী কৌসুলী ও জেলা-উপজেলা জলমহাল কমিটির মতামত উপেক্ষা করে বেআইনীভাবে এ জলমহালের সরকারী রাজস্বাদি পরিশোধ করেছে। সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমিতির সম্পাদক সাহাব উদ্দিনের দাবী আদালতের রায়ে বৈধ ইজারাদার হওয়া স্বত্ত্বেও জনৈক ওয়াটার লর্ডের কারণে তার সমিতি জলমহালটিতে নামতে পারছে না।
জানা গেছে, হাকালুকির গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালটি ১৪২২ বাংলা হতে ১৪২৭ বাংলা পর্যন্ত বন্দোবস্ত নিতে ৪টি মৎস্যজীবি সমিতি আবেদন করে। ২০ একরের উর্ধ্বের জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বোচ্চ দরদাতাদের লীজ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ৬ বছর আগে তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সুপারিশে ভূমি মন্ত্রণালয় সর্বনি¤œ দরদাতাকে সর্বোচ্চ দরদাতা বানিয়ে পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারা দেয়ায় ঘটে বিপত্তি। সর্বোচ্চ দরদাতা সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি মহামান্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৮০৩৪/২০১৫)। মহামান্য হাইকোর্ট পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির বেআইনী লীজ বাতিলের রায় দেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমিতি ‘লীভটু আপীল’ করে (নং-৩৬১৬/২০১৫)। আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আদেশ প্রদান করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি পুনরায় রিভিউ (মামলা নং-৪৩৫/২০১৬ ও ৪৩৬/২০১৬) করে। রিভিউ মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সোনারবাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমিতি রিভিউর বিপক্ষে হাইকোর্টে কনডেম মামলা (নং-৪৪৪/২০১৭) করেন যা এখনও চলমান। এ অবস্থায় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ১৪২৪ বাংলা হতে ১৪২৯ বাংলা পর্যন্ত ইজারা বন্দোবস্তের আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে ১১ অক্টোবর উপজেলা ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহাল মামলাভূক্ত থাকায় মাধবকুন্ড সমিতিকে ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই মর্মে ভূমি মন্ত্রণালয়ে মতামত প্রেরণ করেন। কিন্তু মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমিতির অর্থের যোগানদাতা ফেঞ্চুগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি ভূমি মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে বন্দোবস্তের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। তড়িঘড়ি করে ওই মৎস্যজীবি সমিতির অর্থের যোগানদাতা গত ১৪ অক্টোবর আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বেআইনিভাবে গুটাউরা হাওড়খাল (বদ্ধ) জলমহালের উপর সরকারের কোষাগারে ১ কোটিও অধিক টাকার রাজস্বাদি পরিশোধ করেন।
গত ৯ সেপ্টেম্ববর ভুমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত ১ অধিশাখা হতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরিত পত্র সুত্রে জানা গেছে, ‘সোনারবাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি’ কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-১৫৬১/২০১৮ মামলার আদেশের বিরুদ্ধে মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি কর্তৃক উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত সিভিল পিটিশন ফর ‘লীভটু আপীল’ নং-৩৯০৪/২০১৯ এবং সরকারের পক্ষে সিভিল পিটিশন ফর ‘লীভ টু আপীল’ নং-১৯/২০২০ মামলার আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জেলা প্রশাসক সরকারী কৌসুলীর মতামত চাইলে ১২ অক্টোবর তিনি জেলা প্রশাসক বরাবরে মতামত পেশ করেন এ জলমহাল নিয়ে বিভিন্ন মামলা চলমান। এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের উপর ১৪২৭ বাংলার সরকারী ইজারামূল্য ও অন্যান্য করাদি আদায় করা যাবে না।
সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমিতির সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, তার সমিতি জলমহালটির বৈধ ইজারাদার। উপজেলা ও জেলা জলমহাল কমিটি ও সরকারী কৌসুলীর মতামত উপেক্ষা করে মামলা চলমান অবস্থায় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অর্থের যোগনদাতা প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম আদালত অবমাননা করে বেআইনীভাবে উক্ত জলমহালের ১৪২৭ বাংলা সনের রাজস্ব করাদি পরিশোধ করেছেন। প্রায় ৬ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার বেড়াজালে আটকিয়ে গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহাল থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট করছেন। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় আমরা আদালতের পানে চেয়ে আছেন।
এ ব্যাপারে মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি সালাম উদ্দিন জানান, তার সমিতি গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালের ইজারা পেয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা আছে কি না জানেন না। ফেঞ্চুগঞ্জের নুরুল ইসলাম ও ভোলারকান্দির মোক্তার আলী সমিতির পক্ষে জলমহালের ১৪২৭ বাংলা সনের সমুদয় রাজস্বাদি পরিশোধ করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. মীর নাহিদ আহসান জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফাইল না দেখে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না। ফাইল দেখে বিষয়টির খোঁজ নিবেন।