গত ১৫ দিন ধরে আশ্বাস শুনছি, আমাকে আশ্বাস না দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করুন : রায়হানের মা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২০, ৬:০৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেছেন, আমি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আশ্বাস শুনছি। এখন উদ্যোগ দেখতে চাই। আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার চাই। তাদের শাস্তি চাই না। আমাকে আশ্বাস না দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করুন।
রায়হান আহমদ হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে রোববার (২৫ অক্টোবর) সকল থেকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সমানে আমরণ অনশন শুরু করেন সালমা বেগমসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। সন্ধ্যার আগ মূহূর্তে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসে তাকে অনশন ভাঙার অনুরোধ করেন। এসময় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিস্টদের সাথে যোগাযোগ করাসহ সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র।
মেয়র এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম।
রায়হানকে নির্যাতনের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার (২৫ অক্টোবর) সকালে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনশন শুরু করেন সালমা বেগমের পরিবারের সদস্যরা।
এসময় সালমা বেগম বলেন, ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল অভিযুক্ত আকবর গ্রেপ্তার হয়নি। সারা সিলেটের মানুষ রাস্তায় নেমে আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে। তবু তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এতে আমরা ক্ষুব্ধ।
গত ১১ অক্টোবর রায়হানকে হত্যার পর থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে টানা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে এরআগে সংবাদ সম্মেলনকরে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন মা সালমা বেগম। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ অনশন করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।