অনুতপ্ত বালাগঞ্জবাসী: সাইফুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৯:০২ অপরাহ্ণ
জাগির হোসেন, বালাগঞ্জ:
সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল সিলেট নগর ও ধর্ষকদের নিজ ইউনিয়ন ও উপজেলা। গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের তুহিদ মিয়ার ছেলে।
ধর্ষক সাইফুরের এ জঘন্যতমকাণ্ডে বিব্রত বালাগঞ্জের রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন। তাদের দাবি এসব অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বালাগঞ্জের সচেতন নাগরিকরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বালাগঞ্জের নাগরিকদের ফেসবুকে এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। আলাপকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বলেন, সাইফুর বালাগঞ্জবাসীকে লজ্জিত করেছে। আমরা এ ঘৃণ্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত ধর্ষক সাইফুরের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় পুরো বালাগঞ্জ বাসী লজ্জিত হয়ে পড়েছেন। স্যোসাল মিডিয়াতে ঝড় ওঠেছে- আমরা লজ্জিত, অনুতপ্ত! এধরনের কুলাঙ্গারের প্রয়োজন নেই! আমাদের উপজেলায় এর ঠাই নাই এমন চন্দে।
বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জুয়েল আহমদ বলেন, এমন ঘটনায় আমরা অনুতপ্ত। এই ঘটনায় জরিত কেউ আদর্শিক ছাত্রলীগের নয়। এরা ধর্ষক, এই ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ বলেন, এঘটনার সাথে জরিতরা উদ্দেশ্য প্রনোদিত অনুপ্রবেশকারী এদের কোন দল, জাত নেই। এরা এক নামে ধর্ষক, পূণ্যভূমির মান ক্ষুন্নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বালাগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাসেম অফিক বলেন, অভিযুক্ত ধর্ষক সাইফুরের আমরা লজ্জিত, অনুতপ্ত! তাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হোক, আমাদের উপজেলায় এর ঠাই নাই।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রজত চন্দ্র দাস ভূলন বলেন, ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। এই ঘটনার সাথে যে বা জরিত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চাই। উল্লেখিত ঘটনায় জরিত ধর্ষক সাইফুর বালাগঞ্জ উপজেলার হওয়া আমরা খুবই অনুতপ্ত। বালাগঞ্জের সুনাম যেন আর ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে আগামী প্রজন্মের দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বোয়ালজুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া বলেন, এমন ঘটনার সাথে জরিত বালাগঞ্জ উপজেলার এক ধর্ষক তাতে সত্যিকার অর্থে আমরা লজ্জিত, অনুতপ্ত বালাগঞ্জবাসী। ধর্ষক কে সামাজিক ভাবে ঘৃণা করা হোক, ধর্ষকের কোন সমাজ নেই। ১২৮ বছরের গৌরব আর ঐতিহ্যের পীঠস্থান, ছাত্র জীবনের হাজারো স্মৃতি ঘেরা প্রাণের বিদ্যাপীট, শতাব্দীর মহিরুহ এম সি কলেজকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। আমাদের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসে’র শতবর্ষের ঐতিহ্য এম সি কলেজ ছাত্রাবাসে গনধর্ষনকারী নরপশুদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। যাতে দ্বিতীয়বার এই কাজ করার সাহস কেউ না করে।
এছাড়াও ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা নিয়ে আলাপ কালে টি-স্টলে, রাস্তার মোরে, গ্রাম্য দোকানে আমজনতা বেশ আলোচনা সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, ‘৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন বাপের সামনে মেয়েকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে নিয়ে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যেত। এম সি কলেজে যা ঘটেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেয়ে কম কিসে।
এদিকে, এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ৯ জনকে আসামী করে শাহপরাণ থানায় দায়েরকৃত মামলায় ৬জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরও ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। এজহারনামীয় আসামীরা হচ্ছে এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
সংবাদ লিখা অবধি পর্যন্ত, মামলার প্রধান আসামী ধর্ষনের মুলহুতা সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে গিয়ে এক গৃহবধু ধর্ষণের শিকার হন। ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্রলীগের কথিপয় নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক ওই গৃহবধুকে ছাত্রবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর গত ধর্ষক এম. সাইফুর রহমানের ছাত্রাবাস কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ পাইপগান, রামদাসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করে।