সিলেট সীমান্তে নজরদারি, সব থানাকে সর্তক থাকার নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, আসামিদের ধরতে সীমান্ত এলাকায় সর্তকবার্তা পাঠানোর পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশের আওতাধীন সব থানাকে সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রামের বাড়িতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের ইতিমধ্যে মহানগর পুলিশের সাতটি টিম বিভিন্ন ধাপে কাজ করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার সকাল ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা এম. সাইফুর রহমানের পর এবার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার সকালে হবিগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সাইফুর রহমানকে সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, পুলিশ ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের নানা বিষয় খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাঠে পুলিশের একাধিক টিমও কাজ করে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন সব থানাকে সর্তক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসামিরা যাতে সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে পালাতে না পারে, সেজন্য সর্তক থাকতে বলা হয়েছে থানা পুলিশকে।
গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দুজন।
এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদি হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। মামলা ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- বালাগঞ্জ উপজেলার সোনাপুরের চান্দাইপাড়ার মো. তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮),সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)।
তাদের মধ্যে তারেক ও অর্জুন শিক্ষার্থী না হলেও সবাই এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যার পর ঘটনার খবর পেয়ে টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রথম দিকে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ধর্ষণের ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তারা আপস মীমাংসারও চেষ্টা চালান। পুলিশও প্রথমদিকে ঘটনাটি গণমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যায়।
পুলিশের দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয় বলে স্থানীয়দের দাবি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের সামনে গৃহবধূটিকে গণধর্ষণ করা হয়। কক্ষটি ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। ওই কক্ষের ছাত্রলীগের একটি পক্ষের ৬-৭ কর্মী থাকে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্ত ধর্ষকদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আর ওই দম্পতির ব্যবহৃত গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রাত ১২টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি করা হয়।