রঞ্জিত সরকারের অনুসারী, এরা প্রভাবশালী: ভয়ে মুখ খুলে না কেউ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ওরা নয়জন। সকলেই একে অন্যের সহযোগী। এরা প্রভাবশালী। সিন্ডিকেট সদস্য। এদের দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। যা খুশি তাই করে বেড়াতে গোটা এলাকায়। ওই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে নেতা হলো রবিউল, তারেক, রনি, সাইফুর, মাহফুজ ও অর্জুন। এরা একের পর এক অন্যায় করে বেড়াতো এলাকায়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ টু শব্দটি করতে সাহস পেত না।
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে নগরীর শাহপরাণ থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন।
শাহপরাণ থানা পুলিশের ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ওই মামলার আসামিরা হলেন- এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, রবিউল হাসান, তারেক আহমদ ও অর্জুন। এজাহারভুক্ত আসামিদের সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের অনুসারী এবং ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এমসি কলেজের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন বলেন, শুনেছি কারা যেন স্বামী-স্ত্রীকে আটক রাখে হোস্টেলে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ জানান, যতটুকু জেনেছি স্বামী-স্ত্রীকে একদল ছেলেপেলে হোস্টেলে আটক করে রেখেছিল। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তারা বিষয়টি দেখছে। আমরাও খোঁজ খবর রাখছি।
এদিকে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে রাতভর অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানের রুম থেকে বেশ কিছু দেশীও ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানের রুম থেকে বেশ কিছু দেশীও ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
দীর্ঘদিন এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় অভিযুক্তদের কোনো পদ-পদবি নেই। কিন্তু কলেজের রাজনীতিতে তারা সক্রিয় ছিলেন। তারা মূলত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের অনুসারী।
গণধর্ষণে অভিযুক্তরা সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের সঙ্গে রাজনীতি করতেন বলেও জানা গেছে। একাধিক অনুষ্ঠানে রঞ্জিত সরকার ও ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল ইসলামের সঙ্গে তাদের ছবি রয়েছে।
গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। তবে সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসেন দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এক দম্পতি। এ সময় স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে সাইফুর রহমান ও তার সহযোগী ছাত্রলীগ কর্মীরা পার্শ্ববর্তী ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যান।
পরে স্বামীকে আটকে রেখে ওই গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল, তারেক, রনি, সাইফুর, মাহফুজ এবং অর্জুন। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১০টার দিকে স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
গোটা এলাকায় এনিয়ে নানান আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও তাদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে এদের মধ্যে ২/৩ জন ঢাকায় চলে এসেছে।
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া। এ সময় তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে আজ সকালে ৬ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শাহ পরান থানায় ধর্ষিতার স্বামী মামলাটি দায়ের করেন। রাতে ছাত্রাবাসে পুলিশ অভিযানও চালায়। এ সময় সাইফুরের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি লম্বা দা, একটি ছুরি ও দুটি জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়।
রাত ২টার দিকে নগরীর শাহপরাণ থানা পুলিশ এমসি কলেজের নতুন ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।