সুনামগঞ্জে চুনাপাথর আমদানী বন্ধ : ১০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের ছাতক শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে চেলা ও ইছামতি রুটে প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ চুনাপাথর আমদানী। যার ফলে স্থানীয় দেড় শতাধিক ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চুনাপাথর আমদানী বন্ধ থাকায় সীমান্ত অঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার বারকি শ্রমিক অর্ধহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বানিজ্যিাক ব্যাংকগুলো থেকে ধার-দেনা করে অনেক ব্যবসায়ীরা এখন চোখ-মুখে অন্ধকার দেখছেন। কি ভাবে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করবেন, এনিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেক ব্যবসায়ী দিশেহারা।
সংক্রামক ব্যাধী করোনার প্রভাবে ভারত চুনাপাথর রপ্তানী বন্ধ করে দেওয়ায় এ পরিন্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে কবে চুনাপাথর আমদানী শুরু হবে, এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ব্যবসায়ীরা কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানী বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বছরের সরকারের নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরন হয়নি। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে চলতি ২০২০-২১ইং অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরন হবে কি না, এনিয়ে শংকা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকেই ছাতকের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে বৈধ পথে চুনাপাথরের আমদানী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। চুনাপাথর আমদানীর সূত্র ধরেই এখানে রয়েছে একাধিক চুনা কারখানা। আমদানীকৃত চুনাপাথর ছাতকে নিয়ে আসার পর নৌপথ ও সড়ক পথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রপ্তানী করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চুনাপাথর আমদারীর জন্য নিজেরাই লাখ লাখ টাকা খরচ করে শত শত কাঠের তৈরী বারকি নৌকা তৈরী করে শ্রমিকদের দিয়ে থাকেন। চুনাপাথর আমদাানী বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের বারকি নৌকা গুলো অযন্ত-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের দেনা শোধ করতে না পেরে চরম হতাশায় পড়েছেন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারী থেকে চেলা ও ইছামতি রুটে ও চুনাপাথর রপ্তানী বন্ধ করে দেয় ভারত। করোনার অজুহাতে চুনাপাথর আমদানী বন্ধ করার প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি।
একই অজুহাতে গত ২৮ মার্চ থেকে বিসিআইসি’র নিয়ন্ত্রনাধীন রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানীর রজ্জুপথের মাধ্যমে চুনাপাথর আমদানী বন্ধ রয়েছে। ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানীর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলেও এবিষয়ে এখনও সুরাহা হয়নি। ফলে কারখানার সিমেন্ট উৎপাদনও বিঘিœত হচ্ছে, বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এই অবস্থা চলতে থাকলে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর উৎপাদনও বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছাতক শুল্ক ষ্টেশন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছাতক, চেলা ও ইছামতি রুটে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০কোটি ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৬ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ইং অর্থবছরে চেলা রুটে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ইছামতি রুটে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬হাজার টাকাসহ মোট ৩টি রুটে রাজস্ব আদায়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। চুনাপাথর আমদানী কার্যক্রম স্বাভাবিক না হলে এবার সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরনে বড় বাঁধা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকায় একাধিক চুনাপাথর সরবরাহকারী দিনমজুর শ্রমিকরা জানান, ভারত সীমান্ত দিয়ে চুনাপাথর আমদানী বন্ধ থাকায় খেয়ে না খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। পাথর ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে লোন থাকায় তারাও আমাদের তেমন সাহায্য সহযোগিতা করতে পারছেন না। অনেক শ্রমিক এখন জীবন বাঁচাতে অন্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। কবে চালু হবে চুনাপাথর আমদানী, এই সীদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার বারকি শ্রমিক।
ছাতক লাইম ষ্টোন ইম্পোটার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সাবেক সেক্রেটারী আব্দুল হাই আজাদ বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার বারকি শ্রমিক। প্রতিদিন সরকার প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
এফবিসিসিআই ভুমি সংক্রান্ত কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও ছাতক লাইম ষ্টোন ইম্পোটার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট আহমদ সাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী বলেন, চেলা ও ইছামতি রুটে চুনাপাথর আমাদানী বন্ধ থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চুনাপাথর আমদানীর বিষয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
ছাতক শুল্ক ষ্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম খলিল রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মূলত মহামারি করোনার প্রভাবেই সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে। চুনাপাথর আমদানীর বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভারতের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। তবে চুনাপাথর আমদানী কার্যক্রম চালু হলে রাজস্ব ঘটতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।