সিলেটে শিক্ষার্থীর শরীর ঝলসে দিলেন মক্তবের শিক্ষক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৯:৫০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মক্তবের শিক্ষক কর্তৃক ফ্লাস্কের গরম চা ঢেলে দিয়ে ৭ বছরের শিশু শিক্ষার্থীর শরীর ঝলসে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বের) সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের হেমু তিনপাড়া পশ্চিম মহল্লা জামে মসজিদের মক্তবে এ ঘটনা ঘটে।এ ব্যাপারে প্রতিকার চাইলে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি মহল্লাবাসী। পরে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান আইনের সহায়তা নিতে। ফলে এখন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শিশুর মা ও বাবা জানান, গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বের) সকাল ৬টার দিকে হেমু তিনপাড়া পশ্চিম মহল্লা জামে মসজিদের মক্তবে যায় জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের হেমু মাঝপাড়া গ্রামের এখলাছ উদ্দিনের ছেলে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার নাফিজ নাবিল (৭)। নাফিজকে পাঠদান চলাকালে এক সহপাঠীর সঙ্গে আলাপ করতে দেখে রেগে যান মক্তবের শিক্ষক হেমু ভাটপাড়া গ্রামের বড়হুনার ছেলে হেমু দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল করিম (২৭)। তিনি তৎক্ষণাৎ ফ্লাস্কে থাকা গরম চা নাফিজের শরীরে ঢেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির শরীরের উপরের অংশ ঝলসে যায়। এ অবস্থায় মসজিদের অন্যান্য ছাত্ররা শিশুটিকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
চাকরির সুবাদে শিশুটির বাবা এখলাছ মিয়া হবিগঞ্জে সিরামিক ফ্যাক্টরিতে থাকায় তার স্ত্রীকে বিষয়টি কাউকে না জানাতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ঘটনার পর প্রভাবশালীদের চাপে স্ত্রী শিশুটিকে স্থানীয় ফার্মেসিতে নিয়ে চিকিৎসা দেন এবং স্বামী এখলাছ মিয়াকে খবর দেন। খবর পেয়ে স্বামী গতকাল বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে বাড়িতে ফেরেন এবং শিশু নাফিজের অবস্থা দেখে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটনার বিষয়ে জানতে ওই মসজিদে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান সেই শিক্ষক এখনও পাঠদান করছেন। তাই বিষয়টি তিনি গ্রামের মুরব্বিদের জানান। এরপর এখলাছকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা হয় এবং ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। নিরুপায় হয়ে এখালাছ বিষয়টি ফতেপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল কাহির পছা মিয়াকে জানালে তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শিশুর পিতা এখলাছ মিয়া বলেন, ‘মক্তবের পাঠদান শিক্ষকের এমন আচরণ কোনো পিতা-মাতা মেনে নিতে পারবে না। তিনি শুধুমাত্র মক্তবের শিক্ষক নন, তিনি অত্র এলাকার দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেমু দারুল উলুম মাদরাসাতেও শিক্ষকতা করেন। তার কাছ হতে শিশু নির্যাতন আমি আশা করিনি। বর্তমানে আমার ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসা শেষে আমি থানায় মামলা দায়ের করব।’বিষয়টি জানতে এলাকার অনেকের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, গত মঙ্গলবার মসজিদের মক্তবের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি মহসিন আলী ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ওমর ফারুক বলেন, শিশু নির্বাতনের বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি অভিযোগ আসে, তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।